Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ২১, ২০২১, ০৫:১০ পিএম


 বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখার ঘটনায় উত্তপ্ত ছিলো পুরো বাংলাদেশ। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে মুহূর্তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশ। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। তবে পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তিকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করেছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট। অন্যদিকে সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত হওয়া ইকবাল হোসেন একজন মানসিক প্রতিবন্ধী বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তাদের দাবি— খাবারের লোভে যেকোনো কাজই করে দেন তিনি। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একজনকে ধরা হয়েছে। অভিজ্ঞ টিমের পর্যবেক্ষণ শেষে এটি জানা গেছে। ওই ব্যক্তি কার নির্দেশে ও প্ররোচনায় এ কাজ করেছে তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে একা এ কাজ করেনি। কারো নির্দেশে করেছে, তাদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।’

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তিকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। তিনি কুমিল্লা মহানগরীর সুজানগর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। যদিও তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। 

পুলিশ জানিয়েছে, ইকবালকে গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট কাজ করছে। ভিন্ন কথা বলছে সিসিটিভির ফুটেজে সন্দেহভাজন ইকবালের পরিবার। তাদের দাবি— ইকবালের মানসিক সমস্যা আছে। সে পাগল। খাবারের লোভ দেখিয়ে তাকে দিয়ে সকল ধরনের কাজ করিয়ে নেয়া যায়। 

ইকবালের ভাই রায়হান জানান, আমার ভাই পাগল। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে খেলার মাঠে তাকে নিয়ে ছেলেরা দুষ্টুমি করায় সে সবাইকে জুতা দিয়ে মেরেছিল। যে মানুষ নিজের মাকে পাথর দিয়ে মারতে চায়, সে বুঝেশুনে এমন কাজ করার কথা নয়। ওকে চা-পানি, নাশতা করালে যা বলবে তাই করে।’ তিনি আরও বলেন, তার ভাই যদি অন্যায় করে থাকে, যদি তা সত্য হয়, তাহলে তার শাস্তি হোক। তবে ইকবাল কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।  

ইকবালের মা বিবি আমেনা ছেলের এমন কাণ্ডে বিব্রত জানিয়ে বলেন, ‘ইকবাল মানসিকভাবে অসুস্থ। কিছুদিন আগেই বখাটেপনার কারণে গণপিটুনির শিকার হয়েছে। এরপর থেকে তার আচরণে সবাই অতিষ্ঠ। সে বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে মানুষকে হয়রানি করতো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ইকবাল গোসলখানায় দরজা বন্ধ করে ইয়াবা সেবন করতো। সে মাজারে মাজারে থাকতো। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেতো। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিলো। ইকবাল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ইকবালকে পেলে আপনারা বিচার করবেন। এই সন্তানের জন্য আমার পরিবারটা শেষ হয়ে গেছে।’ বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে ইকবালকে চিনি। সে রঙের কাজ করতো। মাঝে মধ্যে নির্মাণ শ্রমিকের সহযোগী হিসেবেও কাজ করতো। ইকবাল ইয়াবা সেবন করায় প্রায়ই তাকে নিয়ে অনেক দেনদরবার করতে হতো।’ 

এদিকে কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার ঘটনায় দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লা থেকে শুরু করে রংপুর পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এখন পরিবেশ পুরোপুরি শান্ত। মানুষের মন থেকে আতঙ্ক কমে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। 

তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একজনকে ধরা হয়েছে। অভিজ্ঞ টিমের পর্যবেক্ষণ শেষে এটা জানা গেছে। ওই ব্যক্তি কার নির্দেশে ও প্ররোচনায় এ কাজ করেছে তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে একা এ কাজ করেনি, কারো নির্দেশে করেছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। ইকবাল মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। তাই তাদের ধরতে সময় লাগছে। তাদের ধরা গেলে সব তথ্য বের হয়ে আসবে।’