Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সেক্সি ছবির জন্য ট্রলের শিকার অভিনেত্রী

আমার সংবাদ ডেস্ক

জানুয়ারি ১৮, ২০২১, ০৮:৩৫ এএম


সেক্সি ছবির জন্য ট্রলের শিকার অভিনেত্রী

রাজিনি চ্যান্ডি যখন তার গ্ল্যামারাস ফটোশ্যুটের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করলেন, তখন বুঝতে পারেননি সেগুলো এরকম ভাইরাল হবে এবং তিনি অনলাইনে এরকম বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের শিকার হবেন।

রাজিনি চ্যান্ডির বয়স ৬৯। অভিনেত্রী হওয়ার আগে তিনি ছিলেন গৃহিনী। এই বয়সে তাকে সাধারণত দেখা যায় নানা রঙের চমৎকার সব শাড়িতে। কিন্তু এই ফটোশ্যুটে তিনি পরেছিলেন জাম্পস্যুট, দীর্ঘ পোশাক, জিন্স আর খাটো ডেনিমের একটি পোশাক। কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার মাথায় বাগান থেকে সদ্য তোলা সাদা ফুলের মুকুট।

রাজিনি চ্যান্ডির এসব ছবিকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার সংবাদপত্রে বর্ণনা করা হচ্ছে বোল্ড এন্ড বিউটিফুল, অর্থাৎ খুবই সাহসী এবং সুন্দর বলে। তিনি সেখানেই থাকেন। কেরালা এখনো বেশ রক্ষণশীল একটি রাজ্য, সেখানে বেশিরভাগ নারীকে এখনো শাড়ি বা লম্বা স্কার্টের মতো পোশাকেই দেখা যায়। কিন্তু রাজিনি চ্যান্ডির ছবিগুলো রাজ্যের রক্ষণশীলদের সাংঘাতিক উষ্মার কারণ হয়েছে।

চ্যান্ডি বিবিসিকে জানান, এই ফটোশ্যুটের আইডিয়া আসলে ২৯ বছর বয়সী ভারতীয় ফটোগ্রাফার আথিরা জয়ের। প্রথাবিরোধী ফটোগ্রাফির জন্য তিনি বেশ পরিচিত।

আথিরা জয় বলেন, রাজিনি চ্যান্ডি তার নিজের মায়ের চাইতে একেবারেই আলাদা এবং সেটাই তাকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল তার ছবি তুলতে।

তিনি বলেন, ভারতীয় নারীরা তাদের পুরোটা জীবন বিয়ের খাঁচায় আবদ্ধ থেকে সন্তানদের বড় করতে করতে কাটিয়ে দেয়। বয়স ষাট পেরোলেই তারা জীবনের সবকিছু ছেড়ে দেয়। তারা তখন তাদের নাতি-নাতনির দেখাশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আথিরা জানান, তার ৬৫ বছর বয়সী মা একজন গড়পড়তা ভারতীয় নারীর মতই। ষাটোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়, সেগুলোর সবই তার আছে।

তিনি বলেন, কিন্তু রাজিনি একেবারেই আলাদা। তিনি তার শরীরের যত্ন নেন। তিনি শারীরিকভাবে খুবই সুস্থ। তিনি সাহসী, সুন্দর, ফ্যাশনসচেতন। তার বয়স ৬৯, কিন্তু মনের ভেতরে তিনি আসলে এক ২৯ বছরের নারী, ঠিক আমার মতো।

কেরালার সনাতনী সমাজে মিসেস চ্যান্ডি সবসময় ছিলেন এক ব্যতিক্রমী নারী। তার স্বামী কাজ করতেন মুম্বাইতে এক বিদেশী ব্যাংকে, সেই কারণে দীর্ঘদিন মুম্বাইতে কেটেছে। ১৯৯৫ সালে তিনি ফিরে এলেন কেরালায়। তিনি যখন জিন্স পরে, ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে বাইরে যেতেন, তখন লোকে ফিরে ফিরে তাকাতো। তিনি জানান, একবার হাতাবিহীন ব্লাউজ পরায় তাকে রাস্তায় ভৎসনা করা হয়েছিল।

গত কয়েক বছরে তিনি যেসব প্রথাবিরোধী কাজ করেছেন, তার জন্য বার বার গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছেন। যেমন ২০১৬ সালে তিনি ৬৫ বছর বয়সে মালয়ালাম ভাষার একটি কমেডি নাটক, ওরু মুথাসি গাডহা‌য় (দাদীর গদা) অভিনয় করেন। তারপর তিনি আরও দুটি ফিল্মে অভিনয় করেছেন। গত বছর অংশ নিয়েছেন বিগ ব্রাদারের মালয়ালি সংস্করণ বিগ বসে।

চ্যান্ডি বলছেন, তিনি এই ফটোশ্যুটে অংশ নেন বয়স্ক মানুষদের অনুপ্রাণিত করতে, যাতে তারা বিশ্বাস করতে পারে যে এখনো তাদের পক্ষে জীবনকে উপভোগ করা সম্ভব। বেশিরভাগ তরুণ দম্পতি তাদের সন্তানদের বড় করার পেছনে তাদের সময় ব্যয় করে। তারা নিজেদের সাধ-আহ্লাদকে পেছনে ঠেলে রাখে। তারপর তারা উপলব্ধি করে যে, নিজেদের জীবনের স্বপ্ন পূরণের মতো বয়স আর তাদের নেই। তারা ভাবে, এই বয়সে এসব করলে সমাজ কী ভাববে। আমি বিশ্বাস করি আপনি আপনার যা ইচ্ছে করতে পারেন‍, কাউকে আঘাত না করলেই হলো।

এই ফটোশ্যুটটাও তিনি করেছিলেন নিজের আনন্দের জন্য।

চ্যান্ডি বলেন, তার জন্য আথিরা স্থানীয় একটি বুটিক থেকে যেসব পোশাক এনেছিল, সেগুলো যখন তিনি প্রথম দেখলেন, তখন একটু ধাক্কা খেয়েছিলেন। এরকম সেক্সি পোশাক আমি বহুদিন পরিনি। কিন্তু যখন আমি এগুলো পরলাম, আমার মনে হলো, ঠিকই আছে।

গত মাসের শেষের দিকে কোচি শহরে মিসেস চ্যান্ডির বিশাল বাড়িতে এই ২০টি ছবি তোলা হয়। গত সপ্তাহে যখন এসব ছবি ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা হলো, তারপর যেন ঝড় উঠলো, প্রশংসা এবং নিন্দা, দুটোই সমানতালে আসতে লাগলো। বিষয়টি নজরে আসলো স্থানীয় সংবাদপত্রের।

আমারসংবাদ/জেআই