Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫,

মালয়েশিয়ায় নাগরিকত্ব হারাচ্ছে ৪০০০ বাংলাদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ২৬, ২০১৯, ০২:৪৮ পিএম


মালয়েশিয়ায় নাগরিকত্ব হারাচ্ছে ৪০০০ বাংলাদেশি মালয়েশিয়া প্রতিনিধিঃ যে স্বপ্ন নিয়ে সেকেন্ডহোম করার জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল হাজার হাজার বাংলাদেশি সে স্বপ্ন আজ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তৎকালীন মালয়েশিয়া সরকার সেকেন্ড হোম করার জন্য জন্য আহ্বান জানিয়েছে কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাতির মোহাম্মদ তা গুড়িয়ে দিলেন। চার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক আবেদন করেছিলেন সেকেন্ড হোম এর জন্য। তাদের অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এর সুযোগ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যও খুলে বসেছেন। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের আবেদন করেছিল তা বাস্তবায়নের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান মাহাথির মোহাম্মদের সরকার। মালয়েশিয়া সরকারের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার আজিজা জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে চালু হওয়া সেকেন্ড হোম এর আবেদনকারীদের আমরা শুধু ১০ বছরের ভিসা দেবো, নাগরিকত্ব নয়। মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ট্যুরিজম আর্টস অ্যান্ড কালচারের ওয়েব সাইটের সর্বশেষ তথ্য (২০১৮ সালের জুন) অনুযায়ী পৃথিবীর ১৩০টি দেশের ৪০ হাজার নাগরিক ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোমে’প্রকল্পের আওতায় দেশটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। যারা দেশটিতে সেকেন্ড হোমের বাসিন্দা হয়েছে তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে চীনা ও দ্বিতীয় জাপানিরা। আর তালিকার তৃতীয় স্থানেই রয়েছে বাংলাদেশের নাম। পরিসংখ্যানে ঘেঁটে দেখা গেছে, মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোমে চাইনিজ ১১ হাজার ৮২০ জন। জাপানিজ চার হাজার ১৮ জন। আর বাংলাদেশীর সংখ্যা চার হাজার ১৮ জন। এরপর যথাক্রমে ব্রিটেন দুই হাজার ৬০৮ জন, দক্ষিণ কোরিয়া দুই হাজার ৬৯ জন, সিঙ্গাপুর এক হাজার ৪২১ জন, ইরান এক হাজার ৩৮১ জন, তাইওয়ান এক হাজার ৩৪৭ জন, পাকিস্তান এক হাজার ১৭ এবং ভারতের এক হাজার আটজন। ‘মাই এক্সপার্ট’ নামক ওয়েব সাইটে বাংলাদেশীদের বর্তমান শেয়ার সর্বোচ্চ ১০ পারসেন্ট অফ দ্য টোটাল মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএম২এইচ) প্রকল্পের বেনিফিশিয়ারি বলে উল্লেখ রয়েছে। মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোমে আবেদনের শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, যাদের বয়স ৫০+ (বেশি) তাদের জন্য লিকুইড এসেট-এর পরিমাণ থাকতে হবে সাড়ে তিন লাখ মালয়েশিয়ান রিংগিত। বাংলাদেশী টাকায় ৭৩ লাখ টাকা। সাথে মাসিক আয় দেখাতে হবে ১০ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত। অপর দিকে আবেদনকারী যাদের বয়স ৫০ এর নিচে তাদের জন্য লিকুইড এসেট থাকতে হবে পাঁচ লাখ মালয়েশিয়ান রিংগিত। সাথে মাসিক আয় ১০ হাজার রিংগিত। ভিসা পারমিট পাওয়ার আগে যাদের বয়স ৫০ এর নিচে তাদের জন্য মালয়েশিয়ান ব্যাংকে তিন লাখ রিংগিত ফিক্সড ডিপোজিট জমা করতে হবে। আবেদনকারী এক বছর পর সেখান থেকে দেড় লাখ রিংগিত উত্তোলন করতে পারবেন। তবে দ্বিতীয় বছরে অবশ্যই একই পরিমান ব্যালেন্স লেনদেনের পর জমা থাকতে হবে মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম পর্যন্ত। অপর দিকে আবেদনকারী ৫০-এর ওপরে হলে দেড় লাখ রিংগিত দিয়ে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক বছর পর আবেদনকারী তার জমা রিংগিত থেকে ৫০ হাজার রিংগিত উত্তোলন করতে পারবে। এই তালিকার আবেদনকারীকে অবশ্যই এক লাখ রিংগিত ব্যাংকে ব্যালান্স টাকা জমা রাখতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রক্রিয়া ও নিয়ম মেনেই ২০০২ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মোট দেশটিতে চার হাজার ১৮ জন বাংলাদেশী সেকেন্ড হোম প্রকল্পের বাসিন্দা হয়েছেন। সে হিসেবে দেশ থেকে শুধু হুন্ডির মাধ্যমে সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে পাচার হয়েছে নগদ প্রায় চার হাজার ২১৯ কোটি টাকার। যদিও মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ডে হোম প্রজেক্টটি দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম হওয়ার কারণে কোন কোন দেশের কতজন নাগরিক সেকেন্ড হোমের মালিক হয়েছেন সেই তথ্য মালয়েশিয়া সরকার অদ্যাবধি গোপন রেখেছে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাসীন দল এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সরকারি আমলা বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী পেশাজীবী এমনকি দেশটিতে শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমানোদের মধ্যে অনেকে সেকেন্ড হোমের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন এবং দেশটিতে বসবাসের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। কেউ কেউ আবার ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া দিয়েছেন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরের একটি কনডোনিয়ামের ভেতরে ৮-১০ জন বাংলাদেশীর সেকেন্ড হোমের বাসিন্দা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যেখানে ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা এবং ট্রাভেল এজেন্সির মালিকসহ অন্য পেশার বাংলাদেশির নাম পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকাসহ সারা দেশে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। ক্যাসিনোর সন্ধানে র্যাব পুলিশের বিশেষ অভিযানে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগ নেতাদের হেফাজত থেকে বস্তা বস্তা টাকা আর ফিক্সড কোটি কোটি টাকার ব্যাংকের ডিপোজিট উদ্ধার হয়েছে। এখন সময় এসেছে মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশিদেরা সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন তাদের পরিচয় উদঘাটন করা। পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের টাকা কিভাবে ‘নিরাপদে’ দেশ থেকে পাচার হয়েছে সেই রহস্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদঘাটন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এসএ