Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সন্তান জন্মদানে উৎসাহী করতে ডে-অফ, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ইনক্রিমেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জানুয়ারি ৩, ২০২২, ০৯:৪৫ এএম


সন্তান জন্মদানে উৎসাহী করতে ডে-অফ, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ইনক্রিমেন্ট

বয়স্ক জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রজনন হার ক্রমেই কমছে চীনে। সন্তান জন্মদানে যুগলদেরকে উৎসাহী করতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ এবং নীতিগত পরিবর্তন এনেছে কমিউনিস্ট দেশটি।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে জন্মহার বছরে ১৮ শতাংশ করে কমে ২০২০ সালে দাঁড়ায় ১২ মিলিয়ন, ২০১৯ সালে যা ছিল ১৪.৬৫ মিলিয়ন। এই হার গত ৬ দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

দেশটির কিছু কিছু এলাকায় জন্মহার ১০ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। আনহুই প্রদেশের শিঝো সিটিতে ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে নবজাতকের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমেছে।

বেইজিং, তিয়ানজিন এবং জিয়াংশুর মতো নগরীগুলোতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে জন্মহার এক শতাংশেরও কম। 

রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, করোনা ভাইরাস মহামারি ৩০ বছরের কম বয়সী নারীদের মাঝে সন্তান জন্মদানের উৎসাহে আরেক দফা ভাটা ধরিয়েছে। বিতর্কিত এক-সন্তান নীতির শেষ বছর ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২০ সালের শেষ দুই মাসে চীনা নবজাতকের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ কমে যায়।

বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, চীনের জনসংখ্যা এ বছর কমতে পারে। এই সঙ্কট মোকাবেলায় চীন সরকার পাঁচ বছর আগে চালু করা দুই-সন্তান নীতি বাতিল করে গত মে মাসে যুগলদেরকে তিন সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি দেয়। তখন থেকেই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ এবং নীতিগত পরিবর্তন আনে।

চীনে জাতীয় আইন অনুযায়ী, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৯৮ দিন। তবে ২০টিরও বেশি প্রদেশ নারীদেরকে আরো বেশি করে সন্তান জন্মদানে উৎসাহী করতে এই ছুটি আরো বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে।

হেনান এবং হানিয়ান প্রদেশে সন্তান জন্ম দেয়ার পর নারীরা ১৯০ দিন পর্যন্ত ছুটি পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে সিচুয়ান ও গুইঝোতে এই ছুটি ১৫৮ দিন। এছাড়া কিছু প্রদেশ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ইনক্রিমেন্টও দিচ্ছে। যেমন, ঝেজিয়াং প্রদেশে এক সন্তানের মা পাচ্ছেন ১৫৮ দিন ডে-অফ, কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার পর তা বেড়ে দাড়াঁচ্ছে ১৮৮ দিন। হুবেই প্রদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেওয়ার পর নারীরা ১৫৮ দিন ডে-অফ পেয়ে থাকেন। আর তৃতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার পর পান ১৮৮ দিন ছুটি। 

তবে কমিউনিস্ট এই দেশটিতে পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যাপারে কোনো আইন না থাকায় সন্তান জন্ম নেয়ার পর অধিকাংশ অঞ্চলে বাবারা অন্তত ১৫ দিন ডে-অফ ভোগ করেন। তবে কোনো কোনো প্রদেশে যেমন আনহুই ও জিয়াংশিতে বাবারা ৩০ দিন ছুটি পেয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা হলো- দীর্ঘ সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি কোম্পানিগুলোকে নারী কর্মী নিয়োগে অনাগ্রহী করে তুলতে পারে। আর এতে নারীরা বেশি করে সন্তান জন্ম দেয়ায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর এজন্য সরকারকে আরো বেশি করে মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যয়ভার নিতে হবে। 

কিছু স্থানীয় সরকার যুগলদের জন্য সন্তান নেওয়ার খরচ কমানোর চেষ্ট করেছেন। সম্প্রতি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিলান প্রদেশ বলেছে, তারা সন্তান আছে এমন বিবাহিত যুগলকে ২০০,০০০ ইউয়ান (৩১,৪০০ মার্কিন ডলার) ঋণ দেবে। আর এক্ষেত্রে সন্তানের সংখ্যার ভিত্তিতে সুদের হার কমানো হবে। জিংসু প্রদেশের নানটং নগরীতে তিন সন্তান আছে এমন পরিবার প্রতি বর্গমিটারে ৪০০ ইউয়ান হাউজিং সাবসিডি পেয়ে থাকে, যদি তারা ২০২২ সালের মার্চের আগে বাড়ি কিনে। প্রতিবেশি ঝেজিয়াং প্রদেশের বন্দরনগরী নিংবো ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী বছর থেকে একাধিক সন্তান আছে এমন পরিবারকে প্রথম বাড়ি কেনার জন্য হাউজিং প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ ৬০০,০০০ ইউয়ান থেকে বাড়িয়ে ৮০০,০০০ ইউয়ান দেবে।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গানসু প্রদেশে বাবা-মারা দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার পর বছরে ৫০০০ ইউয়ান এবং তৃতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার পর ১০,০০০ ইউয়ান দাবি করতে পারেন। সন্তানের বয়স তিন বছর হওয়া পর্যন্ত তারা এ আর্থিক সুবিধা পাবেন। দুই বা তিন সন্তান আছে এমন পরিবার ৪০,০০০ ইউয়ান পর্যন্ত হাউজিং সাবসিডি পাবেন। সেইসঙ্গে সন্তানের ভবিষ্যত শিক্ষার খরচ কমাতে সরকার বেসরকারি শিক্ষা খাত ও প্রপার্টি মার্কেট মনিটরের মতো নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

উত্তর চীনের লুয়ানঝো কাউন্টি অবিবাহিত তরুণ-তরুণীদের জন্য একটি সরকারি ডাটাবেজ করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো, পারফেক্ট ডেট খুঁজে পেতে তাদের সাহায্য করা। এই ডাটাবেজে অবিবাহিত তরুণ-তরুণীদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন তাদের লিঙ্গ, পেশা, আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড এসব থাকছে।

হুনান প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশন আগস্টে বলেছে, তারা ডিম্বাণু ফ্রিজিং এবং ডিম্বাণু ডোনেশন আইনসিদ্ধ করতে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনে সুপারিশ করবে। চীনে অবিবাহিত নারীদের জন্য ডিম্বাণু ফ্রিজিং নিষিদ্ধ।  

সাংহাই নরমাল ইউনিভার্সিটি গত অক্টোবরে শিশু লালন-পালনে বাবামাদের সাহায্য করতে দাদা-দাদীদের জন্য ক্লাসের ব্যবস্থা করে। যেসব বাবা-মা তিন সন্তান নিতে চান তাদের উপর চাপ কমাতইে এই উদ্যোগ নেয়া হয়। এই কোর্সে পাঠ্যবইও অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাতে দাদা-দাদিরা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নাতি-নাতনিদের প্রতিপালনের পাশাপাশি এই দুই প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে আরো নিবিড় নজর দিতে পারেন।

আমারসংবাদ/জেআই