মার্চ ৬, ২০২১, ০৩:৫০ পিএম
২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. নিশারুল আরিফ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
এরপর ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। পুলিশে শিক্ষানবিশকাল শেষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সিআইডি, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নসহ (এসপিবিএন) বিভিন্ন ইউনিটে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি টাঙ্গাইল, খুলনা ও সিলেটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং রাজশাহীতে পুলিশ সুপার ও ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও তিনি বাংলাদেশ পুলিশের নের্তৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাসে আমার সংবাদের মুখোমুখি হয়ে পুলিশ প্রশাসনের নানা উদ্যোগ এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন মো. নিশারুল আরিফ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমার সংবাদের সিলেট ব্যুরো প্রধান মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত-
আমার সংবাদ : থানায় দালালদের দৌরাত্ম্য এবং হয়রানি রোধে এসএমপির পদক্ষেপ কী, এসএমপির থানাগুলো কী সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে?
নিশারুল আরিফ : ইতোমধ্যেই এসএমপির সবকটি থানা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অফিস থেকে এগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। আর দালালের সমস্যাটা হচ্ছে সামাজিক সমস্যা। অনেকেই আছেন যারা থানায় যেতে ভয় পান। মূলত তারাই বাইরের কারো মাধ্যমে থানার কাজগুলো করান বা চেষ্টা করেন। আর এরাই একটা সময় দালাল হয়ে ওঠে। তবে আমি এখন পর্যন্ত দালালের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। এছাড়া থানায় যেনো দালাল না থাকে এ জন্য প্রতি মাসে একটি দিন ওপেন হাউস ডেতে আমি স্বয়ং উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি এবং সেখানে সকলের মতামত গ্রহণ করি।
আমার সংবাদ : পুলিশে মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে এসএমপির ভূমিকা কী। ডোপ টেস্ট হয়েছে, কাউকে কী চিহ্নিত করা গেছে?
নিশারুল আরিফ : ডোপ টেস্ট একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো পুলিশ সদস্যকে পজেটিভ পাইনি। যদি পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে সাথে সাথেই তার ডোপ টেস্ট করা হবে এবং প্রমাণ হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমার সংবাদ : বিভিন্ন থানায় পদায়নের ক্ষেত্রে বদলি-বাণিজ্যের একটি অভিযোগ আছে পুলিশের মধ্যে। মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে এসএমপিতেও পদায়নের গুঞ্জন আছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
নিশারুল আরিফ : এখন আর এই গুঞ্জন নেই। পদায়নের বিষয়ে পারফরম্যান্স ইভেলোয়েট করার চেষ্টা করছি। অফিসারদের ভালো-খারাপ এবং দুর্বল দিকগুলো বিবেচনা করবো। নীতিমালা মেনেই পদায়ন ও বদলি করা হচ্ছে। যোগ্য লোককে তার যোগ্যতম পুরস্কার দেয়া হবে। সুতরাং এখানে বাণিজ্যেরও কোনো সুযোগ নেই।
আমার সংবাদ : আপনি কমিশনারের দায়িত্ব নেয়ার পর এসএমপিতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
নিশারুল আরিফ : অলরেডি প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) বদলি করা হয়েছে। ফাঁড়িগুলোতেও এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, আমি ‘ট্রিপল আর’ থিওরিতে বিশ্বাসী। যদি কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তাহলে আমি প্রথমে সংশোধন করবো। তা না হলে বদলি করবো, এরপর অপসারণ করবো। সর্বোপরি যার দ্বারা মানুষের উপকার হবে, অন্য অফিসারদের ক্ষেত্রেও যে আমাকে ভালো আউটপুট দিতে পারবে তাকেই আমরা পদায়ন করছি।’
আমার সংবাদ : সিলেটে ‘কিশোর গ্যাং’-এর উৎপাত নিয়ে একটা অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে পুুুলিশের ভূমিকা কী?
নিশারুল আরিফ : কিশোর গ্যাং শব্দ দুটোই সেনসেটিভ। কিশোররা খুব স্পর্শকাতর। দেশের আইন অনুযায়ী কিশোরদের শিশু হিসেবে ডিক্লেয়ার করা আছে। কিশোরদের শিশুর মতো করে ট্রিট করতে হবে। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেট মহানগরে বিভিন্ন কিশোর গ্যাং-এর ১৪০ সদস্যকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলবো, বোঝাবো। পাশাপাশি তাদের শেল্টারদাতা যারা তাদেরকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। এদেরও তালিকা আছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমার সংবাদ : সিলেটে দায়িত্ব পালনে কোনো রাজনৈতিক চাপ অনুভব করছেন কি-না?
নিশারুল আরিফ : আমি সিলেটে যোগদান করার প্রায় চার মাস হয়েছে। এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক কোনো চাপ অনুভব করিনি।
আমার সংবাদ : সারাদেশের মতো সিলেটে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক। মাদক বন্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
নিশারুল আরিফ : মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা হচ্ছে বেশ কিছু চা-বাগান আছে। চা-বাগানের শ্রমিক যারা, আইন অনুযায়ী তারা বাংলা মদ পান করতে পারে, কিন্তু বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে, তারা এর বাইরেও বিক্রি করছে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যকটি থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যদি কেউ এটা বিক্রি করে এবং বাইরের কোনো লোক সেখানে (বাগানে) গিয়ে মদ্যপান করে তাহলে উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর যেহেতু সিলেট মহানগর সীমান্তবেষ্টিত তাই সীমান্তে আমাদের পুলিশ এবং বিজিবি মাদকের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করছে। পাশাপাশি সামাজিকভাবে মাদকের ভয়াবহতা প্রতিহত করা এবং সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আমার সংবাদ : মহানগরীর সড়কে অবৈধ রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার টোকেন-বাণিজ্যের মাধ্যমে এগুলো রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ কী?
নিশারুল আরিফ : সিএনজিচালিত অটোরিকশার আধিক্য সিলেটে বেশি। শুধু মহানগরেই ২২ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বিআরটিএ। ছোট্ট শহরের তুলনায় এর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে আমি যোগদানের পর রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রচুর জব্দ করা হয়েছে এবং যারা সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় নামিয়েছে অলরেডি তাদেরকে বলা হয়েছে— নগরের ভেতরে কোনোভাবেই রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিকশা কিংবা কোনো যান চলাচল করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান আছে।
আমার সংবাদ : থানা হচ্ছে পুলিশের আয়না। আপনি কি মনে করেন, এসএমপির থানাগুলো জনবান্ধব?
নিশারুল আরিফ : আমি অবশ্যই মনে করি, এসএমপির থানাগুলো এখন জনবান্ধব। তবে আরেকটি কথা হলো— থানাগুলো যতই জনবান্ধব হোক না কেন, জনগণকেও পুলিশবান্ধব হতে হবে। তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে।
আমার সংবাদ : আমার সংবাদ ও এর পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন—
নিশারুল আরিফ : আমার সংবাদ আমি নিয়মিত পড়ি। কোয়ালিটি ভালো, বিষয়বস্তুও ভালো, আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার সংবাদ বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। এই ধারাটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমার সংবাদ আগামীতে ভালো কিছু করবে। পাঠকের মণিকোঠায় জায়গা করে নেবে। আমার সংবাদের পাঠকদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন থাকলো।
[embed]<iframe width="727" height="409" src="https://www.youtube.com/embed/akAZJnnkP7A" frameborder="0" allow="accelerometer; autoplay; clipboard-write; encrypted-media; gyroscope; picture-in-picture" allowfullscreen></iframe>[/embed]
আমারসংবাদ/এআই