সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১, ০৬:০০ এএম
বাংলাদেশের নারীদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িঁয়েছে গণপরিবহনে যাতায়াতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া। গায়ে চিমটি কাটা, গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, চুল বা শরীরের কোনো অংশ স্পর্শ করা গণপরিবহনে নিয়মিত ঘটনা। ব্র্যাক পরিচালিত ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারাই নারীদের বেশিরভাগ যৌন হয়রানির শিকার হন, এই হার ৬৬ শতাংশ। রাজধানীর তিতুমীর কলেজের নারী শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে নারী হয়রানি নিয়ে কি ভাবছেন? তা তুলে ধরেছেন আমার সংবাদের প্রতিবেদক রাব্বি হোসেন।
[media type="image" fid="142641" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
গণপরিবহনে হয়রানি নারীদের জন্য অভিশাপ: ইসরাত জেরিন খান (হিসাববিজ্ঞান বিভাগ)
হরহামেশাই নারীদের গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হতে হয়। কর্মজীবী নারী, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখানে মানা হয় না নারীদের জন্য বরাদ্দ করে রাখা সিটের নির্দেশনা বা উঠা নামার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম। সরকারি বাসে দুটো দরজা একটি যাত্রী নামানোর ক্ষেত্রে এবং আরেকটি উঠার ক্ষেত্রে ব্যবহার করার কথা থাকলেও একই পাশ দিয়ে যাত্রী উঠানো নামানো হয়। সিটিং সার্ভিসের নামে চলা বাসগুলোতে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। আবার মহিলা সিটে কেউ বসলে জরিমানা হওয়ার আইন রয়েছে তারও বাস্তবিক কোনও প্রয়োগ হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত নারীদের শিকার হতে হচ্ছে গা ঘেষে দাঁড়ানো, চুল স্পর্শ করা, ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেয়ার মতো ঘঠনায়। এই ভয়ে অনেক নারী গণপরিবহন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকছে। জরুরি সেবা চালুর দেড় বছরে গণপরিবহনে যৌনহয়রানীর অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বাসে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসলে হয়রানির পরিমান কিছুটা কমতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু পুরুষ নারীদের এক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে নিজেদের সিট ছেড়ে নারীদের বসার সুযোগ করে দেয়। নারীদের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে তারা সেসব নারীদের পাশে থাকে। দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা পাল্টানোর পাশাপাশি যদি আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায় তাহলেই এই সমস্যা সমাধান করা অনেকাংশে সম্ভব।
[media type="image" fid="142642" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
হয়রানি প্রতিরোধে আওয়াজ তুলতে হবে: খাদিজা আক্তার (দর্শন বিভাগ)
বর্তমানে সব জায়গায় পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এমনকি দেশ ও জাতির উন্নয়নে ও অংশ নিচ্ছে নারীরা। কিন্তু ঘরের বাইরে রাস্তায় বা গণপরিবহনে চলার পথ যেন মসৃণ নয়। প্রতিনিয়ত গণপরিবহনে বিভিন্ন বয়সের নারীরা হয়রানি শিকার হচ্ছেন। পত্রিকা, টেলিভিশন, বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেখা যায় ধর্ষণ, যৌন হয়রানি খবর। নারীরা বেশিরভাগ সময় যৌন হয়রানি শিকার হয় গণপরিবহনে ভিড়ের মধ্যে। শুধু গণপরিবহণের শ্রমিক নয় পুরুষ যাত্রী দ্বারাও হয়রানির শিকার নারী হয়রানি বন্ধ কারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এর বাস্তবায়নের সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে এবং বাস্তবায়িত হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী শাস্তি দন্ডবিধি কার্যকর করা ও হচ্ছে। চুপ না থেকে আওয়াজ তুলতে হবে প্রতিবাদ এর মাধ্যমেই সমস্যা সমাধান করতে হবে।
[media type="image" fid="142643" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
নিম্ন মন মানসিকতা গণপরিবহনে হয়রানির জন্য দায়ী: আয়েশা আলম আশা (হিসাববিজ্ঞান বিভাগ)
গণপরিবহন নারীদের যৌন হয়রানির সংবাদ নিয়মিত চোখে পড়ে। গণপরিবহণে যে সকল নারীরা যৌন হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে তারা হয়তো কারো পরিবারের মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী বা কারো মেয়ে। হয়রানির ভয়েই নারীরা পাবলিক বাস এড়িয়ে চলে বলে গবেষনায় জানা গেছে। বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে কম আলো, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় গণপরিবহন গুলো যৌন হয়রানির অনুকূল পরিবেশে গড়ে উঠছে। গণপরিবহনে যৌন হয়রানি যে কোনো বয়সকে কেন্দ্র করে হচ্ছে তা নয়। কিশোরী,যুবতী, মধ্যবয়সী নারী সবাই হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। অনেকেই নারীর আপত্তিকর পোশাকের জন্যই নারীরা হেনস্তার শিকার হন। আপত্তিকর পোশাক তার একটা কারণ হতে পারে তবে বোরকা পরিধানকারী নারীরা বা হিজাব পরা নারীরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এই হয়রানি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য গণপরিবহনে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, চালক ও পুরুষ যাত্রীদের উদ্দেশ্যে অভিনব কিছু কাল্পনিক বক্তব্যের লিফলেট, জনসচেতনা এবং যথাযথ কার্যকর আইন গ্রহণ করা।
[media type="image" fid="142644" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
অপরাধীদের শাস্তি ও কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনতে হবে: বিবি মরিয়ম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ)
গণপরিবহনে হয়রানির ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবহনের চালক, হেলপারও সুপারভাইজার জড়িত, যাদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। গণপরিবহনের চলাচলে নারীদের প্রায় সবার অভিজ্ঞতা একই রকম ভীতিকর ও তিক্ততার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনার ছবিসহ অভিজ্ঞতার ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। আলাপ-আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও কিছুদিন পর আবার ভিন্ন রকম ঘটনার মধ্যে দিয়ে যৌন হয়রানির ঘটনা উঠে আসে নারীদের পোস্ট করা লেখা ও ছবির মধ্য দিয়ে। সভা-সেমিনারে নারী অধিকারকর্মীরা সোচ্চার হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এসব হয়রানির বিষয়ে নারীরা তেমন একটা কথা বলতে চান না গণমাধ্যমে। সাম্প্রতিক সময়ে এবং আগে ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার বিচার কার্যক্রমও দ্রুত শেষ করতে হবে। আর অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়াও নারীদের সেলফ ডিফেন্সের শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। এতে মনোবল বাড়বে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও গুণিব্যক্তিদের সমন্বয় করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে এবং যৌন হয়রানিমূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের কাউন্সেলিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।