Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বাবুনগরী-মামুনুলরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়, গ্রেপ্তারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৬, ২০২১, ০৪:০৫ পিএম


বাবুনগরী-মামুনুলরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়, গ্রেপ্তারের দাবি

ধর্মকে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামের মত রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায় বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম। প্রশাসন মাঠপর্যায়ের হেফাজত কর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও মামুনুল, বাবুনগরীর মতো মৌলবাদী সন্ত্রাসের গডফাদারদের এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করছে না। হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে এসব দাবি জানানো হয়। ওই ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’র সভাপতি হাসানুল হক ইনু , কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সমাজকর্মী রাশেক রহমান, ব্লগার এ্যাণ্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি কানিজ আকলিমা সুলতানা, ওয়ান বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক রাশেদুল হাসান, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্কের সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের মতো একই ধারায় ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে চায়- তা সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতের তাণ্ডব ও কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত পরিস্কার। স্বাধীনতা মানে না বলেই তারা সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার চেষ্টা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগেও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন হেফাজতকে কোথাও দেখা যায়নি। এবার তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার জন্যই মোদীর বিরোধিতার কথা বলে সারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে।

তিনি বলেন, যারা জাতীয় সঙ্গীত মানে না, জাতির পিতাকে মানে না, সংবিধান মানে না, তাদের ছাড় দেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। তারা যেন ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করতে না পারে সে ব্যবস্থাই সরকার করবে বলে আমি আশা করি।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। হেফাজতের বর্তমান আমির বাবুনগরী জামায়াতের প্রতিনিধি। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির পরেও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হেফাজতের নেতৃবৃন্দের বড় অংশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান কমিটির অধিকাংশ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনীতিতে যুক্ত।

তিনি বলেন, মোদিবিরোধী বিক্ষোভ ছিল মূলত বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী নস্যাৎ করার চক্রান্ত। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে তালেবানি অভ্যুত্থান ঘটানো। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে জ্ঞাত নয়। বিএনপি তাদেরকে মৌন সমর্থন দিয়েছে। তাণ্ডবের সঙ্গে যুক্ত হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। ভবিষ্যতে তারা সব ইসলামিক দলগুলোকে এক জায়গায় এনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। এসব বিষয়ে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’র সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, হেফাজত ও জামায়াত ধর্মের লেবাসধারী পাকিপন্থার নব্য রাজাকারচক্রের সংগঠন। তারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয় ও তারা দ্বৈতনীতি অবলম্বন করে। তারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয় এবং গোপনে সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশবিরোধী কখনো প্রকাশ্যে, কখনো সশস্ত্রভাবে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং সন্ত্রাসের দায়ে বাবুনগরী, মামুনুলসহ সব নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে। সব মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সব মসজিদে রাজনৈতিক বক্তব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ দূর করতে হবে। সরকারের প্রতি আবেদন জামায়াত-হেফাজত-বিএনপিকে আলাদা করার রাজনীতি বাদ দিয়ে এদেরকে এক ব্রাকেট করে তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিতে হবে। সাপের শেষ রাখতে নেই এবং বেইমানকে ক্ষমা করতে নেই।

কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, হেফাজত যদি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকে, তাহলে মাদ্রাসায় বাচ্চাদের ভর্তি করে আমরা কেন তাদের সদস্য তৈরি করে দিচ্ছি? মাদ্রাসাগুলো থেকে আমরা দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছি না। দারিদ্রতার কারণে বাবা মা তাদের কোমলমতি শিশুদের মাদ্রাসায় পাঠায়। আমরা দরিদ্র মা-বাবাদের সন্তানের জন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-হোস্টেল এগুলো তৈরি করছি না। এ বিষয়গুলো আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাউলদের আমরা মূল্যায়ন না করে হেফাজতকে মূল্যায়ন করি। বাংলাদেশের বাউলদের সম্প্রীতির গান ও তাদের আদর্শ জনগণের নিকট প্রচার করতে হবে। হেফাজতে ইসলাম এ দেশের ভালো ও শক্তিশালী সবকিছুরই বিরোধিতা করে। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ রোধ করতে আমরা যেসব সুপারিশ করেছিলাম সেগুলোর অধিকাংশই সরকার গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা জামায়াতেরই পুরনো দাবি। মুক্তিযুদ্ধকালে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতারা নেজামে ইসলামের নেতৃত্বে ছিলেন, যে দল এবং তাদের ঘাতক বাহিনী জামায়াতের চেয়ে কম নৃশংস ছিল না। এখন তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তরসূরিরা আরও ভয়ঙ্কর ভাষায় ভিন্নমত ও ভিন্নধর্মের মানুষের উপর হামলাসহ এবং যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

হেফাজতের সঙ্গে আপোষ সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে মন্তব্য করে শাহরিয়ার কবীর বলেন, প্রশাসন মাঠপর্যায়ের হেফাজত কর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও মামুনুল, বাবুনগরীর মতো মৌলবাদী সন্ত্রাসের গডফাদারদের এখন পর্যন্ত কেন গ্রেপ্তার করছে না- এটা আমাদের বোধগম্যের বাইরে। হেফাজতের মতো জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যে কোনও ধরনের সমঝোতা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্য আত্মঘাতী হবে না, অন্তিমে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, যা বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত চক্রের মূল উদ্দেশ্য।

আমারসংবাদ/এআই