Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পিপিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ৪, ২০২১, ০২:১০ পিএম


টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পিপিপি

দেশের টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্প অথরিটি (পিপিপি)। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সফলতা দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারের চলমান প্রায় অর্ধশতাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে পিপিপি ভিত্তিতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) অপরিহার্য। পিপিপি ছাড়া এসডিজির সব অভীষ্ট ও লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে বলেই গত ১০ বছরে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে উন্নয়নে এসেছে পাহাড়সম সাফল্য। 

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্র মতে, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিপিপি কর্তৃপক্ষ সফলতা পেয়েছে। ঐসব দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর  কাঙ্খিত উন্নয়ন পেতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অধীনে স্বশাসিত সংস্থা। ইতোমধ্যে উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের পরিবেশ নিশ্চিতে সফল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 

পিপিপি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশে নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি); নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওটি) এবং নির্মাণ, মালিকানা ও পরিচালনা (বিওও) পিপিপির এ তিনটি পদ্ধতিই প্রচলিত রয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের পরিমাণ বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ১২ বিলিয়ন ডলারে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের জন্য করের ওপর ১০ বছরের স্থিতি ঘোষণা করেছিল। এরপর পিপিপি আওতায় কাজের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। 

পিপিপি আওতায় চলমান প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হেমোডায়ালাইসিস কেন্দ্র, জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (এনআইকেডিইউ)-এ হেমোডায়ালাইসিস সেন্টার, ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, গাবতলী-নবীনগর মহাসড়ককে অ্যাকসেস কন্ট্রোল সড়কে উন্নীত করা, ঢাকা সার্কুলার রুট: দ্বিতীয় অংশ (আব্দুলাহপুর-ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-বাবুবাজার-চাষাড়া-সাইনবোর্ড) পর্যন্ত ৬৭ কিলোমিটার নির্মাণ, দুপাশে সার্ভিস লেনসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করা ও দুপাশে সার্ভিস লেনসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১৩৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত, বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি (ব্লক ২ এবং ৫), বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি (ব্লক ৩), ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প, মোংলায় এমপিএর ২ অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ. ঢাকা বাইপাসকে ৪ লেনে উন্নীত করা (মদনপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-জয়দেবপুর, শ্রীমঙ্গলে প্রবীণ নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স, ডমরপুরে বহুতল ফ্ল্যাট বিল্ডিংসহ স্যাটেলাইট টাউনশিপ নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জের হাসপাতাল, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র এবং বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স উন্নয়ন, পিপিপি বেসিস, পায়রা পোর্ট ড্রেজিং, ডেমরায় টেক্সটাইল মিলের উন্নয়ন, পূর্বাচল নতুন শহরে জলের সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন, মংলা ও মীরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, কক্সবাজারে সমন্বিত পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। 

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ মিলিয়ন ডলার। এটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বহুগুণ বাড়বে। 

এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাতটি পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বেসরকারি অংশগ্রহণ বাড়াতে এডিপিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প সংখ্যা বাড়ানো হয়। পিপিপি প্রকল্প হিসেবে ৬১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয় বাজেটে। ১৯-২০ অর্থবছরের পিপিপি প্রকল্পের তুলনায় ২১টি বেশি। 

আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রকল্প আরও বাড়ানো হবে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। 

পিপিপি কার্যালয় সূত্র মতে, দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহ দিচ্ছে। এজন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য বড় বড় প্রকল্পগুলোতে বেসরকারি অংশগ্রহণ জরুরি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে লাভজনক প্রকল্প এডিপিতে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। 

প্রকল্পের অর্থায়নে পিপিপি অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও পিপিপিতে গুরুত্ব দেয়া হবে। এডিপির বিনিয়োগ প্রকল্পের ৩০ শতাংশ পিপিপিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেটি কার্যকর করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্ব বা পিপিপি উন্নয়নে জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্পবিষয়ক রুলস, পিপিপিসংক্রান্ত সিরিজ প্রশিক্ষণ, বোর্ড অব গভর্নরসের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, নির্বাহী বোর্ডের সদস্যদের জন্য বিশেষ প্রকল্প রিভিউ সভা, পিপিপি টিএএফ ফান্ডে অর্থ হস্তান্তর, পিপিপি প্রকল্পের জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পিপিপি আইন-২০১৫ সংশোধন, বাংলাদেশ জাপান জিটুজি পার্টনারশিপ হালনাগাদকরণ, প্রকল্পের সমন্বয়করণ ও পরিচালনে গুরুত্ব এবং জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় পিপিপি অন্তর্ভুক্ত করায় জোর দেয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/এএ/এআই