Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

লকডাউনে যা খোলা, চলাফেরা করতে পারবেন যারা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ৩০, ২০২১, ০১:২০ পিএম


লকডাউনে যা খোলা, চলাফেরা করতে পারবেন যারা!

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ছয়টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আজ বুধবার (৩০ জুন) বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 

এদিকে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, প্রথমে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

আজ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যা যা খোলা ও নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকছে তার মধ্যে  শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন বা টেকওয়ে) করতে পারবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা-বিক্রি করা যাবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেওয়ার জন্যে যাতায়াত করা যাবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবে।

প্রজ্ঞাপন আরও যা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিসেবা, যেমন: কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যক্রম, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান বা কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

তিনটি টি বিষয় নিদিষ্ট দপ্তরকে দায়িত্ব দিয়ে তাদের উপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে যার মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

ইতমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর লকডাউন চলাকালে সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

[media type="image" fid="130635" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

নতুন সময় অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেন চলবে। তবে লেনদেন বাদে ব্যাংকের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকা খোলা থাকবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। 

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে সাপ্তাহিক ছুটিসহ প্রতি রোববার ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অর্থ্যাৎ সপ্তাহে তিন দিন ব্যাংক বন্ধ। সীমিত জনবল দিয়ে অফিস চালাতে হবে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলো জেলা সদর ও উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা রাখতে পারবে এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো জেলা সদরে একটি ও উপজেলায় সর্বোচ্চ ২টি শাখা খোলা রাখতে পারবে। 

কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।  

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। আগত মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওযু করে, সুন্নাত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে। ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিস্কার করতে হবে। মুসল্লিদের  প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে। কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

[media type="image" fid="130637" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

নির্দেশনায় আরোও বলা হয়েছে  শিশু, বয়বৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি জামাতে অংশগ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে। সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদের ওযুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।  সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে খতিব, ইমাম ও মুসল্লিরা দোয়া করবেন। খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।  

অন্যান্য সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/উপাসনালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার/সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন।

উল্লিখিত নির্দেশনা লঙ্ঘণ হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো। 

ইতমধ্যে সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন নিয়ে বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সকল অধস্তন আদালত ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পরিচালনা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

[media type="image" fid="130636" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় প্রত্যেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী জেলা/মহানগরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক শারীরিক উপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে ওই সময় সীমিত আকারে খোলা থাকবে হাইকোর্টের ৩টি বেঞ্চ। এছাড়া ভার্চুয়ালি বসবে আপিল ও চেম্বার আদালত।

বুধবার সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, লকডাউনে নিম্ন আদালত বন্ধ থাকবে। তবে ওই সময় সীমিত আকারে খোলা থাকবে হাইকোর্টের ৩টি বেঞ্চ। এছাড়া ভার্চুয়ালি বসবে আপিল ও চেম্বার আদালত।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার থেকেই সারা দেশে গণপরিবহন, শপিং মল, মার্কেটসহ বেশ কিছু কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।