Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

কুড়িগ্রামে ৩২ মাসে ৩ হাজার ১৯ বাল্যবিয়ে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম


কুড়িগ্রামে ৩২ মাসে ৩ হাজার ১৯ বাল্যবিয়ে

করোনাকালীন বন্ধের মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬৩ ছাত্রীর মধ্যে ১৮ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়টির নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ৯ ছাত্রীর মধ্যে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ৮ জন। নবম শ্রেণিতে অন্যান্য ছাত্রের সাথে মেয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে এখন ক্লাস করছে শুধু নার্গিস নাহার।

বিদ্যালয়টির ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ২২৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ জন ছাত্রী। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে না আসায় কারণ জানতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানতে পারে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ১৮ ছাত্রী।

বৃহস্পতিবার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে ছেলে সহপাঠীদের সাথে ক্লাস করেছে একমাত্র মেয়ে শিক্ষার্থী ছাত্রী নার্গিস নাহার। দীর্ঘ দেড় বছর পর প্রিয় বিদ্যালয়টি খুললে আনন্দমুখর পরিবেশে সবাই পাঠদানে অংশ নিলেও ৯ম শ্রেণিতে একমাত্র মেয়ে শিক্ষার্থী নার্গিস নাহারের মুখ ছিলো মলিন।

কারণ, করোনাকালীন সময়ে দেড় বছরে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তারই ৮ সহপাঠী-ছাত্রী আরফিনা, নুরবানু, নাজমা, স্বপ্না, হেলেনা, চম্পা, লুৎফা ও চাঁদনী। করোনার আগে ৯ম শ্রেণিতে ৩৬ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৯ ছাত্রী ও ২৭ ছাত্র ছিলো।

নার্গিস নাহার জানায়, পুরো ক্লাসজুড়ে আমি একাই ছাত্রী, আমার কোনো বান্ধবী নেই। বাকিরা সব ছেলে সহপাঠী হওয়ায় কারো সাথে মন খুলে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারি না। অতি কাছের প্রিয় বান্ধবীদের বিয়ের কথা জানতে পেরে খুব কষ্ট পেয়েছি। এত অল্প বয়সে সহপাঠীদের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে নিজের মধ্যেও শঙ্কা কাজ করছে। আমি বাল্যবিয়ে চাই না, নিজে সক্ষম না হয়ে অন্যের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলে রহমান জানান, ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মোট ২২৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ জন ছাত্রী। করোনাকালীন দীর্ঘ বন্ধের পর পাঠদান শুরু হলে অনুপস্থিতির কারণ খুঁজতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে জানা যায় ১৮ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।

এরমধ্যে ১০ম শ্রেণির চার ছাত্রীর মধ্যে জেসমিন ছাড়া অন্য ৩ জনেরই বাল্যবিয়ে হয়েছে। ৯ম শ্রেণির ৯ জনের মধ্যে নার্গিস ছাড়া ৮ জনের বিয়ে হয়েছে। এছাড়াও ৬ষ্ঠ শ্রেণির একজন, সপ্তম শ্রেণির দুজন, অষ্টম শ্রেণির চারজনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অতি গোপনে তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছে।

হলোখানার ইউপি সদস্য বাকিনুর রহমান জানান, ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের এই ওয়ার্ডটির সাথে কুড়িগ্রাম জেলা সদরের যোগাযোগব্যবস্থা খুবই খারাপ। তাই দ্রুত সময়ে যে কোনো প্রয়োজনে বিচ্ছিন্ন এই জনপদে প্রশাসনের লোকজনকে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়। মেয়েদের পরিবারের সদস্যসহ অভিভাবকরা অতি গোপনে বাল্যবিয়ে দেয়ায় আমাদের কাছে সময়মতো খবর আসে না।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, কুড়িগ্রাম জেলায় ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট বিয়ে সংঘটিত হয়েছে ২২ হাজার ৩৯১টি। এরমধ্যে নিবন্ধিত বিয়ে ১৯ হাজার ২২১টি এবং অনিবন্ধিত ৩ হাজার ১৭০টি।

জেলার ৯ উপজেলায় বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে ৩ হাজার ১৯টি। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ৭৩০, রাজারহাটে ৭৪, উলিপুরে ২৬১, চিলমারীতে ১৪৬, রৌমারীতে ৮৮, রাজিবপুরে ৫০, নাগেশ্বরীতে ১১৪০, ফুলবাড়িতে ২৯১ এবং ভুরুঙ্গামারীতে ২৩৯টি বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও এ সময়ের মধ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ হয়েছে এক হাজার ১৩৬টি।