Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

তিন আদালতে চলাচলের পথ ‘সৌহার্দ্য করিডোর’ উদ্বোধন

কাজী নাসীর উদ্দীন, সাতক্ষীরা

অক্টোবর ১২, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


তিন আদালতে চলাচলের পথ ‘সৌহার্দ্য করিডোর’ উদ্বোধন

সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান বলেছেন, ‘সৌহার্দ্য করিডোর’ সাতক্ষীরার আপামর জনগণের সৌহার্দ্যের মাইলফলক। মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছে, তাদের জন্য উপহার হিসেবে এই সৌহার্দ্য করিডোর ও তোরণ উদ্বোধন করা হলো।

তিনি আরও বলেন, এই করিডোর একদিকে যেমন রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সৌহার্দ্যের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে, অন্যদিকে বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিচারক-আইনজীবী, কর্মচারী, আইনজীবী সহকারী, বিচারপ্রার্থী মানুষ তথা আপামর জনগণের জন্য ন্যায়বিচারের পথকে প্রশস্ত করবে।

তিনি গত সোমবার জেলা জজ আদালত থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সৌহার্দ্য করিডোরের শুভ উদ্বোধনকালে একথা বলেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার), চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ূন কবীর, সাতক্ষীরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আবু হায়াত মো. শাফিউল আজম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রেজওয়ান উল্লাহ সবুজ, পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফসহ আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী ও বিচারপ্রার্থী মানুষ।

এসময় উদ্বোধক সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার কারণেই করিডোরটি দ্রুত নির্মাণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আদালত চত্বরে আগত বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগই শুধু কমবে না, বিচারবিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনজীবীদেরও দুর্ভোগ কমবে। তিনি নিজেই এই করিডোর ও তোরণের নাম ‘সৌহার্দ্য করিডোর’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, চিফ জুডিশিয়াল আদালত ভবন নির্মিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক এটি উদ্বোধন করেন এবং আইনজীবীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে সেদিন তিনি বলেছিলেন ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রাচীর উঠে যাবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে যথাসময়ে তা হয়নি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত অনেক রাস্তা ঘুরে বিচারক, বিচারপ্রার্থী মানুষ এবং আইনজীবীদের জেলা জজ আদালত থেকে চিফ জুডিশিয়াল আদালত ভবনে যাতায়াত করতে হতো। ফলে অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতো সকলকেই। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়াসহ আহত হন অনেকেই।

এ নিয়ে আইনজীবীরা এবং নাগরিক সমাজ একাধিকবার পথটি উন্মুক্তকরণের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচিসহ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই ডিসি অফিসের সামনে দিয়ে করিডোর তৈরি করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা শেখ মফিজুর রহমান নিজে থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে এবং বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন মহলের সুপারিশের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করিডোর নির্মাণের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়া করিডোরটির জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন গেট নির্মাণ করেন এবং তিনি নিজেই গেটটির নামকরণ করেছেন ‘সৌদার্হ্য করিডোর’ যা সাতক্ষীরাবাসী আজীবন স্মরণ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরটি উদ্বোধন হওয়ায় আদালত পাড়ায় আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী এবং বিচারপ্রার্থী মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

এ ব্যাপারে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আ ক ম রেজওয়ান উল্যাহ জানান, বিচার কাজের পাশাপাশি আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ ও বিচারাঙ্গনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সকল সময় সঠিক সমাধানের পথ দেখিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, জেলা জজ হিসেবে শেখ মফিজুর রহমান সাতক্ষীরাতে যোগদানের পর থেকে অনেক ভালো কাজ করেছেন, কিন্তু তার মধ্যে অন্যতম কাজটি হলো ‘সৌহার্দ্য করিডোর’-এর উদ্বোধন। দীর্ঘ বিলম্বে হলেও আজ সেটি উদ্বোধন হওয়ায় জেলার মানুষের একটি দাবি বাস্তবায়িত হলো। এর ফলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম বলেন, সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পূরণ হয়েছে। আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী ও বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য এ করিডোর খুলে দেয়ার নেপথ্য নায়ক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান। তার এ অবদানের কথা জেলাবাসী চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে।

জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, সরকারের সদিচ্ছা ও সিনিয়র জেলা দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফসল হচ্ছে এই ‘সৌহার্দ্য করিডোর।’ এ জন্য তিনি (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আজীবন সাতক্ষীরার মানুষের দোয়া ভালোবাসা পেয়ে যাবেন।