Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ব্যয় বেড়েছে ২৩০ ভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৪, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


ব্যয় বেড়েছে ২৩০ ভাগ

জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় লাগামহীনভাবে বাড়ছে। বিশ্ব বাজারের অস্থিরতার কারণে দাম বাড়ছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। একই সাথে করোনা মহামারি পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শিথিল হওয়ার প্রেক্ষাপটে জ্বালানি ব্যবহার বাড়তে শুরু করায় এর চাহিদা বাড়তে থাকে। এতে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে আমদানির চাপ বাড়ায় দামের ওপর এর একটা প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কম হওয়ায় ডলারের সংকট দেখা যায়। এমন প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধি পেতে থাকে টাকার তুলনায় ডলারের দাম। 

আমদানি ব্যয়ে এর একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে গত দুই সপ্তাহে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন হয়েছে।  বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে জ্বালানি আমদানির জন্য সরকার ৩৫৯.৯৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩০ শতাংশ বেশি। গত বছরের অক্টোবরে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ১০৮.৯৭ মিলিয়ন ডলার। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এলসি খোলার এবং নিষ্পত্তির তথ্য অনুসারে, গত মাসে জ্বালানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিষ্পত্তিতে সরকারের ব্যয় আগের মাসের তুলনায় ৮৭.৪৩ শতাংশ বেশি। গত সেপ্টেম্বরে এলসি নিষ্পত্তিতে খরচ হয়েছিল ১৯২.০৩ মিলিয়ন ডলার। ব্লুমবার্গ ওএসডি এলএলসি অনুসারে গত বছরের অক্টোবরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিলো প্রায় ৩৫ ডলার। যা চলতি বছরের অক্টোবরে ৭৫-৮৫ ডলারে পৌঁছেছে। চলতি মাসের শুরুতে ব্যারেল প্রতি বেড়েছে ৯৫ ডলার। 

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্থির বিশ্ব বাজারের কারণে জ্বালানির জন্য এলসি নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়েছে। এছাড়াও জ্বালানি-ব্যবহার করোনা মহামারির আগের সময়ের অবস্থায় ফিরে এসেছে। কারণ করোনা-পরবর্তী সময়ে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় জ্বালানি আমদানি বেড়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পরিচালক (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে হঠাৎ করে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।’ 

বিপিসির সূত্রে জানা যায়, গত বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় দৈনিক বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির ব্যবহার ছিলো মাত্র আট হাজার থেকে ৯ হাজার টন। বর্তমানে জ্বালানির দৈনিক ব্যবহার প্রায় ১৭ হাজার টনে পৌঁছেছে। 

এদিকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দামে অস্থিরতার কারণে জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য দেশের একমাত্র জ্বালানি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন যে লোকসান দিচ্ছিল তা সামলানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে দেশে মোট আমদানির পরিমাণ  ছিলো ১০.৮৪ বিলিয়ন ডলার। 

একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ৬.৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে ডলারের সংকট দেখা দেয়। কম আমদানি এবং রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড আট বিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। তবে চলতি অর্থবছরের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। যদিও তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ রপ্তানি প্রবাহের ওপর ভর করে সেপ্টেম্বরে রেকর্ড ৪.১৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। 

সম্প্রতি প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ খাতে আয় হয়েছিল ৩.০১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ খাতে আয় ৩৭.৯৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহ শেষে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ও ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।