Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদায়ী বছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ২৪.৬৫ শতাংশ

জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৭:৫০ পিএম


বিদায়ী বছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ২৪.৬৫ শতাংশ

বিদায়ী বছরে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। একইসাথে মুনাফার হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের পরিমাণ কমেছে। একই সাথে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রাজস্ব আদায় হওয়ায় সরকারের দৈনন্দিন খরচ ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ব্যাংক খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। 

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৪৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। 

এসময় পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এ খাতে সরকারের নিট ঋণ এসেছে ১০ হাজার ২৫ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ হাজার ১৯ কোটি টাকা বা প্রায় ৫৩ শতাংশ কম। 

অন্যদিকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৭৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকার বেশি। যা ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় দুই লাখ ২০ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকায়। সে হিসেবে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৪.৬৫ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। এখনো রাজস্ব আদায়ের হার সেভাবে বাড়েনি। সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে (এডিপি) অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। বিশেষ করে মেগাপ্রকল্পগুলোর কার্যক্রম পুরোদমে চালু রয়েছে। এজন্য সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বেড়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাসিকভিত্তিক এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পাঁচ মাসে সরকার ব্যয় করেছে ৪৪ হাজার ৬১ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৮ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শতাংশ হিসেবে বেড়েছে প্রায় ১৪.৫২ শতাংশ। একই সঙ্গে তার আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।

সমপ্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে শরিয়াভিত্তিক ইসলামি বন্ড ‘সুকুক’ ছেড়ে ৩৪ প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে সরকার। গত ২৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে নিলামে বন্ড বিক্রি করে প্রথম দফায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। এই বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ৪.৬৫ শতাংশ বার্ষিক হারে ভাড়া (ইজারা) দেবে সরকার। এ বন্ডের মেয়াদ হবে ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রেজারি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, সরকারের বছরের শেষে বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ করতে হয়, তাই ডিসেম্বরে এসে ঋণ বেড়েছে। তবে নতুন বছরে আবার কমে আসবে। কারণ জানুয়ারি মাসের অ্যাকশন ক্যালেন্ডারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ খুবই কম দেয়া হয়েছে।

এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিডের প্রভাবে সারা দেশে লকডাউন ছিল। এ কারণে উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় একেবারেই শ্লথগতিতে ছিল। সে কারণে সেই অর্থবছরে সরকার ব্যাংক ঋণ নিয়েছে মাত্র ২৬ হাজার কোটি। যদিও আগের অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ৭২ হাজার কোটি টাকার বেশি। 
সরকারের চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। 

বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল ব্যাংক খাত। সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ নির্ধারণ করেছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে ঋণ নিয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের ঋণের পরিশোধ ছিল ১৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনার কারণে বেসরকারি ঋণের হার নেমে এসেছিল সর্বনিম্নে। তবে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে খাতটি।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার প্রতি অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায় কম যা সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, সরকারের অতিরিক্ত ঋণের ফলে বিদ্যমান তারল্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। এ পরিস্থিতি এড়াতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা সরকারকে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে আরও বেশি ঋণ নিতে বাধ্য করেছে। তার ভাষ্য, ‘সরকারের উচিত তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। না হলে ঋণের বোঝা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’