অক্টোবর ৬, ২০১৬, ০৭:০৪ এএম
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে হত্যা চেষ্টাকারী বদরুল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। জড়িত ছাত্রলীগের রাজনীতিতেও। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরিমা ইউনিয়নের মনিরগাতি গ্রামে। নিজ এলাকায় বদরুলের বদনাম নেই বললেই চলে।
কিন্তু সিলেটে সে যেসব কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, তা গ্রামবাসী কিংবা স্বজনরা জানতেন না। বদরুলের মা, চাচা, ভাই, স্বজন কিংবা প্রতিবেশী- কেউ এ ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। তবে লজ্জা, ভয় আর ঘৃণায় কেউ এখন পর্যন্ত বদরুলকে দেখতে হাসাপাতাল বা আদালতেও যাননি।
এদিকে, গতকাল আদলতে বদরুল হত্যা চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন।আদালতে তিনি জানান , আমি খাদিজাকে অনেক ভালবাসি।তার সঙ্গে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক ছিল। ‘সে (খাদিজা) সব বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, কিন্তু আমাকে পাত্তা দেয় না। বারবার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে গত সোমবার দুপুরে নগরীর আম্বরখানা এলাকা থেকে ২৬০ টাকা দিয়ে একটি চাপাতি কিনি।ক্ষুব্ধ হয়ে আমি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই দিন কোপাই।
জবানবন্দিতে বদরুল আরো জানিয়েছেন, এর আগে ২০১২ সালে খাদিজার খোঁজে তাঁর গ্রামের বাড়ির এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে গণপিটুনি দেয়। এ ঘটনায় জালালাবাদ থানায় স্থানীয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেন তিনি। পরে ২০১৪ সালে শিক্ষক হিসেবে ছাতকের আলহাজ আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি। এ ছাড়া এ বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হিসেবে পদ পাওয়ার কথাও জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি।
এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের জবানবন্দিতে বদরুল পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। ’ বিকালে ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি শেষে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর মুখ্য হাকিম শারাবান তহুরা।
প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর শাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। স্কয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
কলেজছাত্রী নার্গিসকে চাপাতির আঘাতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঠেলে দেওয়া এই ছাত্রলীগ নেতা বদরুল এর আগেও নার্গিসকে উত্ত্যক্ত করে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে। বদরুলের ফেসবুক বন্ধু হাসান সাঈদের এক স্টেটাস থেকে জানা গেছে, বদরুল ছাতকের দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মুনিরজ্ঞাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নতুনবাজার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। টানাপড়নের সংসারে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ার পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসিতেও ভালো ফল করে সে। এরপর ভর্তি হয় শাবিতে।
২০১২ সালে নার্গিস ছিল স্কুলছাত্রী। ওই বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ঘোপাল এলাকায় নার্গিসকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ের শিকার হয় বদরুল। পরে গণধোলাইয়ের ঘটনাকে জামায়াত-শিবিরের হামলা বলে প্রচারণা চালায় সে। কেবল তাই নয়, এ প্রচারণার সফলতা হিসেবে সে ওই সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাও নেয়। পরে সহসম্পাদক হিসেবে জায়গা করে নেয় শাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের। তার সঙ্গে মিশেছেন, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মনিরাগাতিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বদরুলের বেড়ে ওঠা দিনমজুর পরিবারে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের বদরুল স্থানীয় আলহাজ আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক। ওই স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মখলেছুর রহমান বলেন, মনিরাগাতি থেকে বদরুল স্কুলে আসা-যাওয়া করতো। ঘটনার দিন স্কুল বন্ধ ছিল। ঘটনাটি জানার পর স্কুল থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।