ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭, ০৫:০৩ এএম
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার সংখ্যা পাঁচটি। গত এক বছরে হত্যা, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ ১০টি নাশকতার মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। গত দুই মাসে প্রায় সব মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর শাহ আলী থানায় নাশকতার ১০ মামলা ও দারুস সালাম থানায় ১০ মামলায় গত বছরের ৬ জুন চার্জশিট দেয় পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়। বাকিগুলো ঢাকা ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায়, খুলনার ফুলতলী থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় করা সহিংসতা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির পিটিশন মামলা রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এসব তথ্য জানান।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলাগুলো ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। বাকিগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের গত ও বর্তমান আমলে করা। এ মামলাগুলোর মধ্যে জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে যেতে পারেন এমন জল্পনা কল্পনা চলছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন খুব শিগগির সাজা হতে পারে তাঁর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মো. সানা উল্লাহ মিয়া বলেন, তাঁর মামলাগুলো যদি আইন অনুযায়ী চলে এবং বিচারক যদি সরকারের কথা না শুনে ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে মামলা পরিচালনা করেন, তাহলে খালেদা জিয়ার খুব তাড়াতাড়ি সাজা হওয়ার সুযোগ নেই।
এ মামলার বিষয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইনজীবী মো.বোরহান উদ্দিন জানান, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি শেষ পর্যায়ে এটা বলা যায়। কিন্তু এ মামলার এখনও বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। যেমন আদালতের প্রতি অনাস্থা দিয়ে উচ্চাদালতে যাওয়া এবং সেটা মঞ্জুুর হলে তা অন্য আদালতে গেলে মামলাটি সাফাই সাক্ষির জন্য রাখা হবে। এর পর যুক্তি তর্ক তার পর রায়। আর যদি হাইকোর্টের আবেদনটি নামঞ্জুর হয়, তাহলে তার জন্য আপিল করা যেতে পারে।
এরপর বিচারিক আদালতে মামলাটি ফিরে এলেও মে মাসের মাঝামাঝি কিংবা রায় হতে জুন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে সরকার চাইলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের মামলার মতোও চলতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পিপি মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মামলার প্রতিটি বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন, এমনকি তারা আসামিদের পক্ষে ফের এ মামলায় ইনভেস্টিগেশন চান এবং সামান্য অজুুহাতে উচ্চ আদালতে যান তাহলে কিভাবে এ মামলার রায় হবে?
এ বিষয়ে দুদক পিপি এম এ সালাউদ্দিন ইস্কান্দার কিং বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি অনাস্থা নিয়ে উচ্চ আদালতে গেছেন, বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না এ মামলার রায় কবে হচ্ছে। খালেদার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা পাঁচটি মামলার বর্তমান অবস্থা-
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি: খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ জানান, দুদকের করা পাঁচটি মামলার মধ্যে রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা। এ মামলাগুলোর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
এখন তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জেরা রয়েছে। চলতি মাসেই এর তারিখ রয়েছে। তবে এ মামলাটি যে বিচারকের অধীনে রয়েছে তার প্রতি অনাস্থা এনে উচ্চ আদালেত আবেদন করা হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলাটি করে দুদক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। এ মামলার অগ্রগতির ব্যাপারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, হাইকোর্টে এ মামলার ব্যাপারে করা রিট খারিজ হয়ে গেলে লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে। এখন মামলাটি আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি: বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঠিকাদারি কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করে দুদক। মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি শেষ হয়েছে। আদেশ হয়নি।
গ্যাটকো দুর্নীতি: কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য গ্যাটকো লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি শেষ, আদেশের অপেক্ষা আছে।
নাইকো দুর্নীতি: নাইকো রিসোর্স কোম্পানিকে অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলা করে দুদক। বিশেষ জজ আদালত ৯ এ মামলার চার্জ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। এ মালায় খালেদা জিয়া ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উচ্চ আদালতে গেছেন। তবে মওদুদ আহমদ এর আবেদন শুনানি হলেও খালেদা জিয়ার আবেদন এখনও শুনানি হয়নি। এ মামলায় অভিযোগ হলো, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজস্ব দুইটি আবিষ্কৃত গ্যাস ফিল্ডকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন উল্লেখ করে পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন বিএনপি সরকার।