মার্চ ২৬, ২০১৬, ০৩:২৪ এএম
আঠারো থেকে বাইশ বছর বয়সটা অদ্ভুত এক সময়। কৈশোরের সিঁড়ি থেকে যৌবনের সিঁড়িতে পা রাখার ঠিক আগের মুহূর্ত যেন এটা। আশেপাশের মানুষজন ছোট হিসেবেও দেখছে না,আবার কেউ পূর্ণবয়স্ক হিসেবে কেউ মেনেও নিচ্ছে না। অদ্ভুত কিছু পরিবর্তন দেখা যায় নিজের মধ্যে। মেয়েদের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো বেশ লক্ষণীয়, ছেলেদের মাঝে অনেকটাই চাপা। কারো কারো মধ্যে বড় আকারে, আবার কারো মধ্যে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আসে। কৈশোরের চঞ্চলতা স্থিমিত হয়ে আসে। নিজেকে নতুন রূপে দেখতে ভালো লাগে। বিভিন্ন ধরনের কথা ভাবতে ভালো লাগে। গানের প্রতি মোহ তৈরি হয়। ছোটখাটো যে ব্যাপারগুলো যা আগে ভালোমতো খেয়ালই করা হয়নি, সেই ব্যাপারগুলোই এখন লক্ষণীয় হয়ে উঠে। এমন অনেক জিনিস- যা আগে বিরক্ত লাগত- সেগুলোই প্রিয় হয়ে উঠে ধীরে ধীরে। কিছুটা স্বাধীনতা পাবার চেষ্টা, সেই সাথে নতুন কিছু করার আগ্রহ জন্মে। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় অনেকেই। যদিও সবার ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটে না কিন্তু ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এই বয়সের সবার মধ্যেই আসে।
চাঞ্চল্যতা স্থিমিত হয়ে আসেঃ-
কৈশোর পার করার পর মানসিকতার পরিবর্তন হয় বড় আকারে। হুটহাট এখানে-সেখানে যাওয়া, এটা-সেটা করে ফেলার প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। আগে যেমন সব পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন ভালো লাগতো, এখন সেসব পারিবারিক
পরিবেশে যেতেই লজ্জাবোধ হয়।
নিজের নতুন পৃথিবীতে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ইচ্ছা হয়। কলেজ পার হয়ে ইউনিভার্সিটির আঙিনায় এসে নতুন ভাবে নিজেকে চিনতে শেখার সময় এটা। ইউনিভার্সিটি জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে নিজেকে সময় দেয় অনেকেই। আগের মত চাঞ্চল্যতা ঝেড়ে ফেলে একলা সময় কাটানোতে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় এই বয়সে।
ছোট শিশুর প্রতি মমতা বাড়েঃ-
১৫-১৮ বয়সের কিশোর কিশোরীদের সাথে ৪-৫ বছর বয়েসী বাচ্চাদের খুনসুটি লাগা নতুন কিছু নয়। চঞ্চল বাচ্চাদের দুষ্টুমি ও ছোটবাচ্চাদের কান্না অনেকের কাছে অসহনীয় ব্যাপার মনে হলেও ছোট শিশুদের প্রতি মায়া মমতা বাড়তে শুরু করে আঠারোর পর থেকেই। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারটি অনেকেই লক্ষ্য করেন না। কিন্তু এই সময়ে বাচ্চাদের উপস্থিতি অনেক আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য লাগে। তারুণ্যের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
এনগেজমেন্ট রিং ও বিয়ের পোশাকের প্রতি আগ্রহ জন্মেঃ-
বিয়ের পোশাক সবসময় কেন একই ধাঁচের হয়, এত গয়না কেন লাগে, মানুষ বিয়ে কেন করে- এইসব চিন্তা করতে করতে কৈশোর পার করলেও ২০-এ এসে ব্যাপার গুলো বদলে যেতে শুরু করে। নিজের জগতে নিজের মনে স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। আমার বিয়েতে এই ধরনের পোশাক পরবো, ওই ধরনের গহনা থাকবে, এনগেজমেন্ট রিংটা এমন হবে এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসবে। এমনকি ছেলেরাও "বউ" ব্যাপারটি নিয়ে বেশ ভাবতে শুরু করে এই সময়ে। আর এই ভাবনা গুলোই প্রেমের প্রথম ধাপ।
বিপরীত লিঙ্গের বিশেষ কারো প্রতি টানঃ-
এই সময়ে প্রেম সম্পর্কিত ব্যাপারটি অনেক আগ্রহ ও গুরুত্বের সাথে নিয়ে থাকে ছেলেমেয়েরা। ক্লাসে কিংবা ইউনিভার্সিটির বিশেষ কোন একজনকে ভালো লাগা শুরু করে। তাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। পছন্দের মানুষটির পাশে নিজেকে কল্পনা করে আনন্দ পেতে ভালো লাগে। যদি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে তার সাথে সময় কাটাতে বেশি ভালো লাগে। গভীর রাতে ফোনালাপ করতে পছন্দ করে অনেকে। সেই বিশেষ মানুষটিকেই জীবনের লক্ষ্য বলে মনে করে।
দায়িত্বশীলতা বাড়েঃ-
নিজেকে বড় প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই দায়িত্ব নেয়ার প্রবণতা আসে। এমন কিছু কাজ যা আগে করতে চাইত না, সে সব কাজ নিজ দায়িত্বে করে থাকে অনেকেই। নিজের কাজকর্মের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। ছোট খাট কাজ ও দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও মনোযোগী হয়ে উঠে মনের অজান্তেই। নিজেকে সবার সামনে দায়িত্বশীল ও কর্মঠ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলে খুব আনন্দ হয়।
কমবয়সীদের উপদেশ দেয়ার প্রবণতা বাড়েঃ-
কৈশোর পরবর্তী সময়ে নিজেকে অনেক বয়স্ক ভাবেন অনেকেই। তারই প্রক্ষিতে নিজের থেকে কমবয়সী ছেলেমেয়েকে নানান বিষয়ে উপদেশ দিতে ভালো লাগে। ছোটোদের কিভাবে পড়ালেখা করা উচিত, কি কি করলে ভালো হবে, কেমন ভাবে চলতে হবে এই ধরনের উপদেশ দেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এমনকি ছোটখাটো অনেক বিষয় আছে যা নিজে কিশোর বয়সে করেছে, সেসব বিষয়েও বাঁধা দিতে চায় ছোটোদের।
সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিবর্তন আসবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে সবারই একই ধাঁচের পরিবর্তন আসে এই সময়ে।