Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫,

কিডনি পাথর চিকিৎসায় হোমিওপ্রতিবিধান

প্রিন্ট সংস্করণ॥ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

নভেম্বর ২৩, ২০১৯, ০৯:৫৯ পিএম


কিডনি পাথর চিকিৎসায় হোমিওপ্রতিবিধান কিডনিতে পাথর হওয়া একথাটা বর্তমানে শুনলে আঁতকে ওঠার কিছু মনে করারও নয়। কিডনি মানবদেহের অন্যতম প্রধান অংশ। বেঁচে থাকার জন্য যেমন মস্তিষ্ক ও হূদযন্ত্র জরুরি, ঠিক তেমনি জরুরি হলো কিডনি। কিডনি না থাকলে মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব! সাধারণত মানুষের পেটের ভেতর মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়ার উভয় পাশে একটি করে দুটি কিডনি থাকে। কিডনিগুলো দেখতে অনেকটা সিমের মতো। কিডনির রোগগুলোর মধ্যে স্টোন বা পাথর হওয়া অন্যতম। কিডনি স্টোনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নির্ভর করে কিডনির কোথায় স্টোন আছে এবং কীভাবে আছে। স্টোনের আকার আকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পাথর খুব ছোট হলে সেটি কোনো ব্যথা ছাড়াই দীর্ঘদিন এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত শরীরে সুপ্তভাবে থাকতে পারে! স্টোনটি বড় হলে বা বড় হতে শুরু করলে এটি কিডনির ভেতরে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং ব্যথা অনুভূত হয়। কিডনির মধ্যে শক্তদানার মতো কঠিন পদার্থ বা স্টোনের মতো জমা হলে তাকে রোনাল স্টোন বা কিডনি পাথর বলা হয়। এ পাথর কখনো মূত্রগ্রস্থি, কিডনি, মূত্র নালি, আবার কখনো মূত্রথলিতে এসে জমা হয়। ফলে বিভিন্ন সমস্যাসহ প্রস্রাব বন্ধ বা অবরোধ হতে পারে। কেন হয় কিডনিতে পাথর : কিডনির প্রধান কাজ হলো শরীরের রক্ত থেকে ময়লা আবর্জনা ও পানি প্রস্রাব আকারে শোধন করে বের করে দেয়া।দুটি ইউরেটারের মাধ্যমে প্রস্রাব মত্রথলিথে এসে জমা হয়। তারপর প্রয়োজন মতো বেরিয়ে আসে। আমরা সারাদিন যা খাদ্য-খাবার গ্রহণ ও পান করি তা হতে শরীরের প্রয়োজনীয় পদার্থ বা অংশ শরীর কোষ নিজে রাখে।বাকি অপ্রয়োজনীয় অংশ বর্জ্য পদার্থ হিসাবে রক্তের সাথে মিশে। কিডনি এ বর্জ্য পদার্থ রক্ত থেকে বের করে প্রস্রাব আকারে নিঃশরণ করে। তাছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও কিডনি পালন করে। সাধারণত পাথর যে কারণে হয় : কিডনিতে অনেক রকম স্টোন হতে পারে। যেমন— ইউরিক স্টোন, স্ট্রভাইন স্টোন, সিস্টিক এবং ক্যালসিয়াম স্টোন হতে পারে। যে খাবারে ইউরিয়া বা ইউরিক এসিড বেশি থাকে এবং ক্যালসিয়ামজাতীয় খাবারের কারণেও কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যারা প্রতিনিয়ত পান খান তারাও ক্যালসিয়াম খাচ্ছেন। অর্থাৎ যিনি পানের সাথে চুন খাচ্ছেন আর চুনে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকে। একটু ভেবে দেখুনতো চুন আর মিষ্টি মসলা খাচ্ছেন তাদের জন্য কি এটা হওয়া খুব অসাধারণ? অতিরিক্ত স্নেহজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে যারা রক্ত সংবহন ক্রিয়ার ব্যাঘাত, পরিপাক বা পরিপোষন কাজের ব্যাঘাত, যেকোনো সংক্রামক রোগ যদি মূত্রযন্ত্র আক্রমণ করে, শরীর থেকে অতিমাত্রায় ঘাম নির্গত হওয়ার ফলে জলবায়ু, পেশী, সর্বোপরি বংশে থাকলেও হতে পারে। কীভাবে বুঝবেন কিডনিতে পাথর আছে : যেকোনো বয়সে, নারী-পুরুষ— সকলেরই কিডনিতে পাথর জমতে পারে, বারবার প্রস্রাবের বেগ, বেদনা কিডনি বরাবর হয়ে নিম্ন কুচকির দিকে, পেটে ও বুকে প্রসারিত হতে পারে।কুচকি, অণ্ডকোষ প্রভৃতি স্থানে অত্যন্ত যন্ত্রণা হতে পারে-
  • যেকোনো ভারী জিনিস তুলতে গেলে বা রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ বেদনা হতে পারে
  • অণ্ডকোষ ঊর্ধ্ব দিকে টেনে ধরার মতো অনুভব হতে পারে
  • কখনো হঠাৎ বেদনা ও যন্ত্রণা বা সবসময় বেদনা থাকতে পারে
  • বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। হিক্কা কপালে ঘাম, নাড়ী দ্রুত ক্ষীণ, দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত
  • সর্বদাই প্রস্রাব করার ইচ্ছা থাকে কিন্তু প্রস্রাব বাহির হয় না।
  • প্রস্রাব ফোঁটা ফোঁটা বের হয়। তলপেটে ব্যথা হয় প্রস্রাবে পুঁজ- রক্ত মিশ্রিত থাকতে পারে
  • রক্ত প্রস্রাব
  • প্রস্রাব ধোঁয়ার মতো দেখায়
  • দু-তিন নালে প্রস্রাব হতে পারে
  • প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে
  • কোনো কোনো অবস্থার প্রেক্ষিতে রোগী বোধ করে পাথর যেন নড়া চড়া করে। ছোট বাচ্ছারা প্রস্রাব করতে গিয়ে কান্না করতে পারে
  •  যথাসময়ে চিকিৎসা না নিলে এর জটিলতা কিডনির প্রদাহ, শরীর হাত-পা ফুলে যেতে পারে
  • মূত্র অবরোধ হয়ে যন্ত্রণায় অস্থির ও অজ্ঞান হতে পারে।
যা করতে হবে আপনাকে :
  • পানি পানের অভ্যাস রাখতে হবে প্রয়োজন মতো
  • শরীরে ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না। বেদনা উপশমের জন্য হালকা গরম সেক দেয়া যেতে পারে
  • হাঁটাহাঁটিতে বা ঝাঁকিতে অনেক সময় পাথর নেমে আসতে সাহায্য করে
  • দুধ, সাগু, বার্লি, দধি সুপথ্য লেবুর শরবত বিশুদ্ধ পানি, বিশুদ্ধ বায়ু
করণীয় :
  • রোগ নিয়ে অবহেলা করা যাবে না
  • চুন-সুপারি খাবেন না
  • অম্ল, অর্জনকর দ্রব্য, মদ্যপান, মাংস, গুরুপাক খাদ্য বর্জন করবেন। পেইনকিলার দীর্ঘদিন সেবন না করা উওম
হোমিওপ্রতিবিধান : রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এই জন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসককে রোগীর পুরা লক্ষণ নির্বাচন করে চিকিৎসা দিতে পারলে। পিত্ত পাথরের রোগীর চেয়ে কিডনি পাথর রোগীর চিকিৎসা দেয়া অল্প সময়ে সম্ভব। হোমিও চিকিৎসা : হোমিওপ্যাথিতে কিডনি স্টোনের জন্য অনেক মেডিসিন আছে। তবে ওষুধগুলো এলোপ্যাথির ন্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা চলে না। যেমন— লাইকোপোডিয়াম, লিথিয়াম কার্ব, সার্সাপেরিলা, থ্যালাপসি-বার্সা, এপিজিয়া, ক্যানথারিস ও ক্যালকেরিয়াসহ অনেক মেডিসিন লক্ষণের ওপর আসতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া নিজে নিজে মেডিসিন ব্যবহার করলে রোগ আরও জটিল আকারে পৌঁছতে পারে। লেখক : ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি কো-চেয়ারম্যান : হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র এসটিএমএ