Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০১ মে, ২০২৪,

হূদরোগ নিরাময়ে হোমিও পরামর্শ

প্রিন্ট সংস্করণ॥ ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

জানুয়ারি ১৯, ২০২০, ১২:৫৬ এএম


হূদরোগ নিরাময়ে হোমিও পরামর্শ আমাদের দেশের মানুষ যে দুটি রোগে চিকিৎসা করতে গিয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয় তার একটি হলো ক্যান্সার, অন্যটি হলো হূদরোগ বা হার্ট ডিজিজ। অথচ অন্যান্য জটিল রোগের মতো হূদরোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে প্রতিহিংসাবশত হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে নানা রকমের বদনাম ছড়ায়, তার মধ্যে একটি বড় অপপ্রচার হলো হোমিওপ্যাথি ওষুধ দেরিতে কাজ করে। অথচ হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন, হূদরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ অনেক রোগের জন্য মানুষ ৫০ বছরও এলোপ্যাথি ওষুধ খেয়ে পুরোপুরি রোগ মুক্ত হতে পারে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও তারপরও কেউ বলে না যে, এলোপ্যাথি ওষুধ বিলম্বে কাজ করে। হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে প্রচলিত বদনামগুলোর একটি মূল কারণ হলো— নাম-ডাকওয়ালা দক্ষ হোমিও চিকিৎসকের যথেষ্ট অভাব, বলা যায় খুবই অভাব, হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। হূদরোগ চিকিৎসার বিবরণী পড়লে হতাশ প্রাণে আশার আলো দেখা দেয়। আজ হূদরোগ নিয়ে কলাম ধরেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা. এম এ মাজেদ। তার প্রবন্ধে লিখেন— হূদরোগ বলতে সাধারণভাবে হূৎপিণ্ড, রক্তবাহী ধমনী ও শিরা, মস্তিষ্ক সম্পর্কিত রোগ বোঝায়। হূদরোগের অনেক কারণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোস ক্লোরোসিস প্রধান। সাথে সাথে বয়সের সাথে হূৎপিণ্ড ও ধমনীর গঠনগত পরিবর্তনও হূদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। হূদরোগ সাধারণত বয়স্কদেরই হয়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই হূদরোগে বেশি আক্রান্ত হন। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, তামাক জাতীয় দ্রব্য বর্জনের মাধ্যমে অনেকাংশে হূদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে। হূদরোগ বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- জন্মগত হূদরোগ, করোনারি হূদরোগ, হার্ট ফেইলর, কার্ডিও-মায়োপ্যাথি, উচ্চ রক্তচাপ জনিত হূদরোগ, কোর পালমোনাল (হূৎপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়), সেরেব্রোভাস্কুলার রোগ (মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তবাহিকার অসুখ, যেমন- স্ট্রোক), প্রান্তিক ধমনীর রোগ, রিউম্যাটিক হূদরোগ (বাতজ্বরের কারণে হূদপেশি ও ভাল্ব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া), কার্ডিয়াক ডিসরিদ্মিয়াস ইত্যাদি। হূদরোগের কারণ : হূদরোগের জন্য অনেক কারণই থাকতে পারে। যেমন— বয়স, লিঙ্গ, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম, খাবার-দাবারে অসচেতনতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চলিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, নিয়মিত হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম, খাবার-দাবারে একটু সচেতন হলে এবং উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চলিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে হূদরোগের ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস করা যেতে পারে। কোন বয়সে হতে পারে : হূদরোগ সব বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরাই এ রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণভাবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সি হূদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশই হূদরোগে মারা যায়। আবার ৫৫ বছর বয়সের পর স্ট্রোক করার সম্ভাবনাও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আবার বয়সের সাথে সাথে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, ফলে করোনারি ধমনী রোগ হয়। কাদের হতে পারে : প্রজননে সক্ষম নারীর তুলনায় পুরুষদের হূদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। প্রজননের সময়ের পরে নারী ও পুরুষের হূদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা সমান। যদি কোনো নারীর ডায়াবেটিস থাকে, তার হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষের চেয়ে বেশি। মধ্যবয়সি মানুষের ক্ষেত্রে করোনারি হূদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রায় পাঁচগুণ বেশি। হূদরোগে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ মূলত হরমোনগত পার্থক্য। হূদরোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ : বুক, পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। পাকস্থলীর উপরের দিকে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হবে। মাথা হালকা লাগতে পারে। হূদরোগ প্রতিরোধে করণীয় : হূদরোগ নানান রকমের হতে পারে, যেমন- জন্মগত হূদরোগ, বাতজ্বরজনিত হূদরোগ, উচ্চরক্তচাপ জনিত হূদরোগ, হূদপিণ্ডে স্বল্প রক্ত চলাচলজনিত হূদরোগ, হূদপিণ্ডে মাংসের দুর্বলতাজনিত হূদরোগ ইত্যাদি। হূদরোগ প্রতিরোধে সতর্ক হলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। নিম্নে জন্মগত হূদরোগ এবং অন্যান্য হূদরোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বর্ণনা করা হলো— জন্মগত হূদরোগ প্রতিরোধে করণীয় : গর্ভধারণের কমপক্ষে তিন মাস আগে মাকে গগজ ওহলবপঃরড়হ দিতে হবে। গর্ভবতী মায়ের উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সেটা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় যেকোনো রকম ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যান্য হূদরোগ প্রতিরোধে করণীয় : কমবয়সি ছেলে বা মেয়ের গলাব্যথাসহ জ্বর হলে এক সপ্তাহের জন্য বেলাডোনা দিয়ে চিকিৎসা করলে ভবিষ্যতে হূদরোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা হ্রাস পাবে। আবার স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। হূদপিণ্ডে রক্ত চলাচলজনিত কারণে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা প্রতিরোধে খাবার এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন:
  • প্রতিদিন কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় হাঁটা বা ব্যায়াম অথবা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এটা হূদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
  • প্রচুর পরিমাণে ফলমুুুল, শাকসবজি, তরকারি, টক জাতীয় ফল খেতে হবে। অপরদিকে লবণ ও চিনি কম খেতে হবে।
  • বেশি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার বর্জন করতে হবে।
  • মদ্যপান, জর্দা, তামাক, ধূমপান ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। ধূূূমপান ছাড়ার পরবর্তী ১০ বছর সময় পর্যন্ত হূদরোগের ঝুঁকি থেকে যায়।
  • ফাস্টফুড, টিনজাত ও শুকনো খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে চা, কফি এবং কোমলপানীয় বর্জন করতে হবে।
  • ধূমপান, অ্যালকোহল বা যেকোনো ধরনের মাদক বর্জন করতে হবে।
  • মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং কিছু কিছু ওষুধ হূদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
হোমিও সমাধান : রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ডা. হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে হূদরোগ চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিসহ যেকোনো জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিত্তিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগতভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। হোমিও চিকিৎসা : অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ প্রাথমিকভাবে যেসব ওষুধ নির্বাচন করে থাকে সেগুলো হলো— ক্র্যাটিগাস, অরম মেটালি কাম, এডোনিস ভান্যালিস, অর্জুন, আর্নিকা মন্টেনা, গ্লোনয়িন, ভ্যানাডিয়ম, ল্যাকেসিস, ডিজিটালিস, বেলাডোনা, স্পাই জেলয়া এনথেলমিয়া, ন্যাজাট্রাইপুডিয়ামস, নাক্স ভূমিকাসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে। লেখক : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয়কমিটি কো-চেয়ারম্যান হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র। আমারসংবাদ/এসটিএমএ