একনজরে প্রেম দিবসের আগের দিনগুলো
আমার সংবাদ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০, ০৯:৩৯ এএম

ভ্যালেন্টাইন’স উইক শুরু হয়ে গেছে । অর্থাৎ প্রেমের সপ্তাহ। ভ্যালেন্টাইনস ডের সাতদিন আগে থেকেই শুরু হয় ভালোবাসার সপ্তাহ। প্রতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি ‘রোজ-ডে’ পালন করে ভ্যালেন্টাইন-উইকের শুরু।
৭ ফেব্রুয়ারি রোজ ডে দিয়েই শুরু হলো ভালোবাসা সপ্তাহ। প্রেমিক-প্রেমিকা হোক বা যে কোনও প্রিয়জন, হাতে ধরে গোলাপ উপহার দেয়ার দিন আজই। ভালোবাসার ফুল গোলাপ।
ভালোবাসার ভাষা বুঝতে ও বোঝাতে পারে গোলাপ। তাই উপহার হিসেবে গোলাপেরই চাহিদা এখন সবার উপরে।
লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপি বিভিন্ন রঙের সঙ্গেই বদলে যায় গোলাপের ভাষা, আবেদন। রোজ ডেতে যারা উইশ করছেন, তাদের জেনে রাখা ভালো কোন রঙের গোলাপ কীসের প্রতীক।
লাল গোলাপ : প্রেমের কবিতা, গল্পে বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে রক্ত গোলাপের কথা। সৌন্দর্য, ভালবাসার প্রতীক লাল গোলাপ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের ধরণ বদলে গেলেও প্রেম নিবেদনের ভাষা হিসেবে লাল গোলাপের আবেদন চিরন্তন।
গোলাপি গোলাপ : শুধু লাল গোলাপ নয়, মনের ভাষা বোঝাতে পারে গোলাপি গোলাপও। ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা, স্বীকৃতির প্রতীক গোলাপি গোলাপ। প্রিয় বন্ধু, নির্ভরযোগ্য সঙ্গীকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলতে পারেন গোলাপি গোলাপ দিয়ে।
সাদা গোলাপ : সাদা ফুল আমরা সাধারণত শোকজ্ঞাপনে ব্যবহার করলেও সাদা গোলাপের গুরুত্ব অনেক গভীর। বিয়ের সময় কনের হাতে দেওয়া হয় একগুচ্ছ সাদা গোলাপ। কারণ, এই ফুল নতুন জীবন শুরুর প্রতীক। আধ্যাত্মিকতারও প্রতীক সাদা গোলাপ। মৃতহেদ, কবরের উপর সাদা গোলাপ রাখার অর্থ তাকে মিস করা। তবে শুধু মৃত ব্যক্তিকে নয়, কাউকে মিস করলে আপনি তাকেও সাদা গোলাপ পাঠিয়ে জানাতে পারেন মনের ভাষা।
কমলা গোলাপ : প্যাশন বোঝাতে আমরা লাল রং ব্যবহার করে থাকি। তবে আসলে কিন্তু কমলা গোলাপ আবেগ, উত্সাহ, উদ্দীপনার প্রতীক। সহযোদ্ধাকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবহার করা হয় কমলা গোলাপ। কমলা গোলাপ উপহার দিয়ে বোঝাতে পারেন, আপনি পাশে আছেন।
হলুদ গোলাপ : জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কের প্রতীক হলুদ গোলাপ। হলুদ গোলাপ বন্ধুত্বের প্রতীক। আনন্দ, সুস্বাস্থ্য বোঝাতেও হলুদ গোলাপ ব্যবহার করা হয়। আপনার জীবনে তার মূল্য বোঝাতে প্রিয়বন্ধুকে দিতে পারেন একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ।
এভাবে রোজ ডের পর ৮ ফেব্রুয়ারি প্রপোজ ডে,
৯ ফেব্রুয়ারি চকোলেট ডে,
১০ ফেব্রুয়ারি টেডি ডে,
১১ ফেব্রুয়ারি প্রমিজ ডে,
১২ ফেব্রুয়ারি হাগ ডে,
১৩ ফেব্রুয়ারি কিস ডে এবং
১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে।
উইকিপিডিয়ায় প্রদত্ত তথ্যমতে, প্রায় ১০০ প্রজাতির বিভিন্ন বর্ণের গোলাপ ফুল রয়েছে। গোলাপ পাঁপড়ির গড়ন ও বিন্যাসে একরূপ নান্দনিকতা রয়েছে যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। গোলাপের আদি নিবাস এশিয়া মহাদেশে। অল্প কিছু প্রজাতির আদি বাস ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ও উত্তরপশ্চিম আফ্রিকা মহাদেশে। ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাসের জন্য গোলাপ বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।
গ্রীক উপকথায়, প্রেমের দেবী ভেনাস এর পায়ের রক্ত থেকে গোলাপ এর জন্ম। আরব দেশীয় কাহিনীতে আছে সাদা গোলাপকে বুলবুলি পাখি আলিঙ্গন করায় বুলবুলি পাখি গোলাপ এর কাটায় আহত হয়ে বুলবুলি পাখির রক্তে সাদা গোলাপ থেকে লাল গোলাপ এর জন্ম। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে আছে বিষ্ণু ব্রহ্মাকে পদ্ম-ই শ্রেষ্ঠ ফুল বললে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে স্বর্গে নিয়ে সেখানে হালকা রঙের একটি সুগন্ধি গোলাপ দেখান। গোলাপ সমন্ধে এইরকম অনেক গল্প আছে।
গোলাপ ফুল যে সৌন্দর্যের প্রতীক, তাই নয়। এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। গোলাপের পাপড়ি থেকে জ্যাম,জেলি প্রস্তুত করা হয়। সুগন্ধির জন্য গোলাপজল ব্যবহার করা হয়।গোলাপ ফুলের সুবাসকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করা হয়। অর্নামেন্টারি উদ্ভিদ হিসেবে গোলাপের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। গোলাপ থেকে তেলও উৎপাদিত হয়।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী গোলাপের রয়েছে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার। গোলাপ ভিটামিন এ, সি, বি৩ ও ই এর অন্যতম উৎস। গোলাপজল ‘রিলাক্সিং এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা স্নায়ুগুলোকে সতেজ করে। গোলাপ পাপড়ির চা আলসার, অ্যাজমা, ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সহায়তা করে। গোলাপ চা পিত্তথলি ও যকৃতকে ভালো রাখে।এ ছাড়া গোলাপজল চুলের বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানিতে বিয়ের বিশেষ ফুল দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। বিয়ের জন্য চাই তাদের দারুণ সুন্দর একটি ফুলের তোড়া। যে তোড়াটি বিয়ে চলাকালীন কনের হাতে থাকে। সাধারণত এই তোড়া তৈরি করা হয় সাদা গোলাপ ফুল আর সামান্য সবুজ পাতা দিয়ে, যা বধুর সাদা বা অফ হোয়াইট বিয়ের পোশাকের সাথে দারুণ মানায়।
জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে কার্নিভালকে পঞ্চম ঋতু হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এই কার্নিভালেও থাকে ফুলের মহা সমারোহ। রোজেন মোনটাগ বা গোলাপি সম্ভার গাড়ি থেকে প্রচুর চকলেট আর ফুল দেওয়া হয় রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য মানুষকে। সেদিন কোনো সুন্দরী মেয়েকে কোনো পুরুষ ফুল দিলে যেন চুমু দেবার অধিকারও তার হয়ে যায়।
হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলেও জার্মানরা ফুল নিয়ে যায়। তাই প্রতিটি হাসপাতালের কাছাকাছি কোনো না কোনো ফুলের দোকান থাকে। মনকে প্রফুল্ল রাখতে অবশ্যই ফুলের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
আমারসংবাদ/এমএআই