Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

লাইপোমা টিউমারের কারণ ও প্রতিকার

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

অক্টোবর ২৬, ২০২০, ০৬:২৫ পিএম


লাইপোমা টিউমারের কারণ ও প্রতিকার

মানবদেহ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চর্বি (ফ্যাট টিস্যু)। চামড়ার নিচের চর্বি আমাদের দেহকে বাইরের আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আবার দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্যও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

কিন্তু উপকারী এ চর্বি কখনো কখনো কারো কারো ক্ষেত্রে উপকারের পাশাপাশি ভিন্ন রূপে দেখা দেয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এ চর্বি বৃদ্ধি পেয়ে টিউমারের রূপ ধারণ করে।

এ ধরনের টিউমারকে বলে লাইপোমা বা স্কিন টিউমার। লাইপোমা একটি চর্বিযুক্ত ফোলা অংশ যা খুব ধীরে ধীরে বড় হয়। এটি সাধারণত ত্বক ও মাংসপেশীর মাঝে সৃষ্টি হয়। আবার রোগটি ফ্যাটি টিউমার নামেও পরিচিত। আঙ্গুল দিয়ে সামান্য চাপ দিলে এটি নড়াচড়া করে, তাই সহজেই একে শনাক্ত করা যায়। এটি সাধারণত বেশ শক্ত হয়।

একজন ব্যক্তির একাধিক লাইপোমা হতে পারে। যেকোনো বয়সে লাইপোমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে মধ্য বয়সিদের এটি বেশি হয়ে থাকে। লাইপোমা একটি নির্দোষ টিউমার যা চর্বিযুক্ত টিস্যু দিয়ে গঠিত।

নরম টিস্যু টিউমারগুলোর মধ্যে লাইপোমা হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ লাইপোমাগুলোতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে নরম অনুভূত হয়, সাধারণত নড়ানো চড়ানো যায় এবং সাধারণভাবে এগুলো ব্যথাহীন।

অনেক লাইপোমা ছোট আকারের, সাধারণত এক সেন্টিমিটার ব্যাসের কম; কিন্তু কোনো কোনো লাইপোমা ছয় সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় আকারের হতে পারে। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সে লাইপোমা বেশি দেখা দেয়, তবে শিশুদেরও এটা হতে পারে। কারো কারো মতে, লাইপোমা ক্যান্সারে রূপান্তর ঘটতে পারে।

লাইপোমা একটি চর্বিযুক্ত ফোলা অংশ যা খুব ধীরে ধীরে বড় হয়। এটি সাধারণত ত্বক ও মাংসপেশীর মাঝে সৃষ্টি হয়। আঙ্গুল দিয়ে সামান্য চাপ দিলে এটি নড়াচড়া করে, তাই সহজেই একে শনাক্ত করা যায়। এটি সাধারণত বেশ শক্ত হয়। একজন ব্যক্তির একাধিক লাইপোমা হতে পারে। যেকোনো বয়সে লাইপোমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে মধ্য বয়সিদের এটি বেশি হয়ে থাকে।

লাইপোমা কোনো ক্যান্সার নয় এবং সাধারণত এর ফলে বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না। এর জন্য কোনো চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি এটি বিরক্তিকর মনে হয় বা বড় হয়ে যায় এবং এর কারণে যদি ব্যথার সৃষ্টি হয় তাহলে অপারেশন করা প্রয়োজন। বিভিন্ন টাইপের লাইপোমা রয়েছে। যেমন—

অ্যানজিওলাইপোমা : ত্বকের নিচে ব্যথাপূর্ণ গোটা। লাইপোমায় অন্য সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

অ্যানজিও লাইপো লিওমায়োমা : এটি অর্জিত লাইপোমা। একক। উপসর্গবিহীন গোটা। ত্বকের নিচে গোলাকার টিউমার। পরীক্ষা করলে নরম মাংসপেশী কোষ, রক্তনালী, সংযোজক কলা ও চর্বি পাওয়া যায়।

নিউরাল ফাইব্রোলাইপোমা : নার্ভ ট্রাংক বরাবর ফাইব্রো-ফ্যাটি টিস্যুর অতিরিক্ত বৃদ্ধি। নার্ভে চাপ পড়ে।

কনড্রয়েড লাইপোমা : মহিলাদের পায়ের গভীরে হয়। শক্ত, হলুদ টিউমার।

স্পিনডল-সেল লাইপোমা : উপসর্গবিহীন। বয়স্ক পুরুষদের পিঠ, ঘাড় ও কাঁধের ত্বকের নিচে হয়। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।

প্লিওমরফিক লাইপোমা : স্পিনডল-সেল লাইপোমার মতো এই লাইপোমাগুলো বয়স্ক পুরুষদের পিঠের বেশিরভাগ জায়গায় ও ঘাড়ে হয়ে থাকে।

ইন্ট্রাডার্মাল স্পিনডল সেল লাইপোমা : এই লাইপোমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের হয়। সচরাচর মাথা, ঘাড়, পেট, বুক, পিঠ এবং হাত ও পায়ে হয়ে থাকে।

হাইবারনোমা : এই লাইপোমাতে থাকে বাদামি চর্বি। লাইপোমার সবচেয়ে সাধারণ ধরন হলো সুপারফিসিয়াল সাবকিউটেনিয়াস লাইপোমা, অর্থাৎ ত্বকের ঠিক নিচে অবস্থানকারী লাইপোমা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো বুক, পিঠ, পেট, উরু এবং হাতে দেখা যায়।

লাইপোমা টিউমারের লক্ষণ— ত্বক ফুলে যাওয়া, পিঠে শক্ত পিণ্ড বা চাকা দেখা দেয়া, বাহুতে শক্ত পিণ্ড দেখা দেয়া, ঘাড়ে শক্ত পিণ্ড দেখা দেয়া, কাঁধে শক্ত পিণ্ড দেখা দেয়া, ত্বকের বৃদ্ধি, স্তনের চাকা বা পিণ্ড, ত্বকের ক্ষত অস্বাভাবিক, ত্বক-কুঁচকি ফুলে যাওয়া, পায়ে শক্ত পিণ্ড দেখা দেয়া।

লাইপোমা টিউমারের চিকিৎসা : এই রোগে আক্রান্ত হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ অনেকেরই এটি হয় এবং অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও বুঝতে পারে না। টিউমারগুলোতে ব্যথা না করলে কিংবা হাঁটাচলায় অসুবিধা না হলে সাধারণত লাইপোমার চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

সৌন্দর্যগত কারণে এগুলো অপসারণ করা যেতে পারে। সাধারণত অপারেশনের মাধ্যমে লাইপোমা ফেলে দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের পরও আবার লাইপোমা দেখা দিতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রেই লাইপোমা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।

তবে অভ্যন্তরীণ অঙ্গের লাইপোমাগুলো মারাত্মক হয়। আন্ত্রিক লাইপোমাগুলো রক্তপাত ঘটায়, ক্ষত সৃষ্টি করে এবং ব্যথাপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। লাইপোমার ক্যান্সার রূপান্তর হওয়ার ঘটনা খুব বিরল।

এই অবস্থার নাম লাইপোসারকোমা। হাড় ও কিডনিতে কিছু ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা ঘটে। অগভীর লাইপোমার চেয়ে গভীর লাইপোমাগুলো আবার হতে পারে। কারণ গভীর লাইপোমার ক্ষেত্রে সর্বদা পুরোপুরি কেটে আনা সম্ভব হয় না।

হোমিওসমাধান : রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এর জন্য আপনাকে অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে, হোমিওপ্যাথিতে লাইপোমা প্রায় শতভাগই নির্মূল হয়ে যায়।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আধুনিক ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ও কষ্টকর থেরাপি ছাড়াই সুস্থতা লাভ করা সম্ভব এবং রোগীর লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে পারলে লাইপোমা টিউমার ও যেকোনো টিউমারের হোমিওতে চিকিৎসা দেয়া আল্লাহর রহমতে সম্ভব।

লেখক—
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র

আমারসংবাদ/এসটিএম