Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

কোলন ক্যান্সারের কারণ ও হোমিও প্রতিকার

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

অক্টোবর ৩১, ২০২০, ০৭:১৩ পিএম


কোলন ক্যান্সারের কারণ ও হোমিও প্রতিকার

ক্যান্সার একটি কালান্তর ব্যাধি। ক্যান্সার নামটা ভয়ংকর সৃষ্টিকারী। ভয়াবহতা সম্বন্ধে আমার কিছু না বললেও চলে, বর্তমান সমাজে, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের মধ্যে এ ভয়ংকর রোগে জীবন দান করেনি এমন লোক পাওয়া যাবে না।

যুদ্ধ, প্লাবন ও দুর্ভিক্ষ, সমাজ জীবনে সাময়িকভাবে আসে আবার চলে যায়, বহু জীবন ধ্বংস করে, কিন্তু এই বিধ্বংসী রোগ ক্যান্সার ক্রমাগত মানবসমাজকে ধ্বংসের দিগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চেয়ে ও আর ও বড় বড় মনীষী এর ধ্বংসলীলার বিবরণ দিয়েছেন। গত দুই যুগ ধরে এ রোগে যত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন, কোনো যুদ্ধেও এত লোক জীবনাহুতি দেয়নি।

এ রোগে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও জীবননাশের কোনো হিসাব নেই। রাখা সম্ভবও নয়। অসহায় মানুষ অনবরত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে এ রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে। স্বামীহারা স্ত্রী, স্ত্রীহারা-স্বামী, পিতৃ-মাতৃহারা শিশু, জীবনের অর্জিত সম্পদ ভেসে যাওয়া ক্যান্সার এসব দুঃখ-কষ্টের কারণ।

এর একমাত্র কারণ রোগ ও এই রোগের উৎপত্তির কারণ সম্বন্ধে অজ্ঞতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধেও অজ্ঞতা। ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া বা মানুষকে রক্ষা করার একমাত্র পথ হলো রোগের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা।

এ বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা. এমএ মাজেদ বলেন.. কোলন ক্যান্সার পরিপাকতন্ত্রের বৃহদন্ত্রের এক প্রকার টিউমার বা ক্যান্সার। রেকটামে আক্রান্ত হলে তখন তাকে রেকটাল ক্যান্সার বলে। কোলন-রেকটাল ক্যান্সার অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথমে নিরাপদ টিউমার যেমন পলিপ দিয়ে শুরু হয়, তার পর পলিপ ধীরে ধীরে এডেনোমায় রূপান্তরিত হয়। আর এই এডেনোমা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপ নেয়।

নব্বই ভাগ কোলন ক্যান্সার ৫০ বছরের পর দেখা যায়। বাকি দশ ভাগ ৫০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় অধিকাংশ কোলন ক্যান্সারের কোনো উপসর্গ না থাকায় রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে আসে না। ক্যান্সার এমন এক ব্যাধি যা মানবদেহের যেকোনো অংশকে আক্রমণ করতে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বৃহদান্তের ক্যান্সারকে বলা হয় বাওয়েল বা কোলন ক্যান্সার ক্ষুদ্রান্তের তুলনায় বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের হার অনেক বেশি। পশ্চিমা বিশ্বে নারী-পুরুষ উভয়েরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। আমাদের দেশেও ইদানীং এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

কোলন ক্যান্সার কি?
বৃহদান্ত্রে যখন কোষ বিভাজনের নির্দিষ্ট ধারা ভঙ্গ হয় এবং কোষগুলো অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে কোলন ক্যান্সার বলে। বেশিরভাগ কোলন ক্যান্সারণ বিভিন্ন ধরনের পলিপ-এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফল। প্রথমে বৃহদন্ত বা অ্যাপেডিক্সের ক্ষুদ্রাকার কোষীয় পিন্ডে পলিপ তৈরি হয়। ধীরে ধীরে পলিপ থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে সুস্থ টিস্যুকে আক্রমণ করে।

কোলন ক্যান্সারের কারণ
পরিবেশ ও জিনগত কারণে বৃহদন্ত্র ও মলাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পায়। খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত গরু বা ছাগলের মাংস খাওয়া, খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের অনুপস্থিতি, ধূমপান ও মদ্যপান এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

স্থূলকায় ব্যক্তিদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে ব্যায়াম (বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে) এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস রোগটির সম্ভাবনা বাড়ায়।

বিশেষ করে মা, বাবা, ভাই কিংবা বোনের বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে। এছাড়া অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

লক্ষণসমূহ
১. তীব্র পেটব্যথা
২. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
৩. পেটের ভিতর থেকে খাবার উগড়ে আসা
৪. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
৫. হঠাৎ ওজনহ্রাস
৬. রক্তশূন্যতা
৭. জন্ডিস

কলোরেকটাল ক্যান্সারের উপসর্গ
১. মলদ্বারে রক্ত ক্ষরণ অর্থাৎ পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া রেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইলস বলে সন্দেহ করে চিকিৎসা করা হয়।
২. মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন। যে রোগী পূর্বে স্বাভাবিক দৈনিক মলত্যাগ করত। এ রোগ হলে তার কনসটিপেশন বা পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া, অল্প পায়খানা হওয়া। আবার কখনো কখনো মিউকাস ডায়রিয়া দেখা যায়। বিশেষ করে সকালে।
৩. পেটেব্যথা, বমি (ইনটেসটিনাল অবস্ট্রাকশন) ইত্যাদি ইমারজেন্সি উপসর্গ নিয়ে আসতে পারে।
৪. পেটে চাকা বা টিউমার নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসতে পারে।
৫. দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা ও খাবারের অরুচি ইত্যাদি নিয়েও ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
৬. খাদ্য নালীর বাইরে এই রোগ অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন- লিভার, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে।

কোলন ক্যান্সার রোগ নির্ণয় পদ্ধতি : চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কোলনোস্কোপি পরীক্ষার মাধ্যমে এর অস্তিত্ব সহজেই নির্ণয় করা যায়। আর হোমিওপ্যাথি হলো লক্ষণের ওপর নির্ভর।

হোমিও সমাধান : ক্যান্সার চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসককে তিনটি অবস্থার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে, হবে এবং এ তিনটি অবস্থার জন্য রোগী লক্ষণ সংগ্রহ পদ্ধতি ও তদনুযায়ী করতে হবে, প্রথমাবস্থা, ক্যান্সার মায়াজম বংশগতভাবে প্রাপ্ত হয়ে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করেছেন এবং নানা প্রকার অস্বাভাবিক লক্ষণসমূহ শিশুকাল থেকে প্রকাশ পাচ্ছে। দ্

বিতীয়াবস্থা. যুবক অবস্থায় বংশগতভাবে ক্যান্সার মায়াজম প্রাপ্ত হয়ে অনেক কষ্টকর উপসর্গে যখন ভুগতে থাকেন তখন চিকিৎসককে ঐ একই পদ্ধতিতে লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে। তৃতীয়াবস্থা. যখন ক্যান্সার রূপটি প্রকাশ পেয়েছে তা সে দেহের অভ্যন্তরে কোনো যন্ত্রেই হোক বা বাইরের কোনো অঙ্গেই প্রকাশিত হোক, এ অবস্থায় চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ক্যান্সারের শ্রেণিভেদ, যন্ত্রভেদ এবং জীবনীশক্তি অবস্থাভেদে এর আরোগ্য সম্ভাবনা অনেকখানি নির্ভর করে।

হোমিও চিকিৎসা : রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করা হয়, তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকে রোগীর রোগের পুরা লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে কোলন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা দেয়া আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব।

বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকবৃন্দ প্রাথমিকভাবে যেই ব্যবহার করে থাকেন, এলুমিনা, নাইট এসিড, রুটা, সিপিয়া, আর্জেন্ট না, কার্বো ভে, কেলি কার্ব, লাইকো, ফাইটোলাক্কা, নাক্স, কারসোনিস, সালফার, মেডোসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে। তাই মেডিসিন নিজে নিজে ব্যবহার না করে বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক : কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র

আমারসংবাদ/এসটিএম