অক্টোবর ১৬, ২০১৬, ০৩:১৫ পিএম
চা ছাড়া কি একদিনও চলে? পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চা খাওয়ার প্রচলন আছে। আবার চায়ের উৎপত্তি নিয়ে নানান ধরণের গল্পও প্রচলিত আছে। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গল্পটি হলো ২৭৩৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের দিকে চীনের সম্রাট শেনাং সব সময় পানি ফুটিয়ে পান করতেন। একদিন শেনাংয়ের জন্য একটি পাত্রে পানি ফোটানো হচ্ছিল। হঠাৎ কয়েকটি পাতা সেই পানিতে উড়ে এসে পরে।
এতে কিছুক্ষনের মধ্যেই পানির রং পাল্টে যায়। সম্রাট শেনাং বেশ আগ্রহ নিয়ে সেই পানি পান করেন এবং এর স্বাদে ও গন্ধে মুগ্ধ হয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে বেশ চাঙ্গাও হয়ে যান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং চা খাওয়ার প্রচলন ঘটে। প্রাচীন কালে মাথা ব্যাথার ওষুধ হিসেবেও চা ব্যবহার করা হতো।
সবুজ চা খেতে তেতো স্বাদের। তাই অনেকেই অবহেলা করে থাকেন এই চা কে। কিন্তু সবুজ চায়ে রয়েছে ভিটামিন এ, ই, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন মিনারেল। নিয়মিত সবুজ চা সেবন করলে অনেক অসুখ-বিসুখ এড়ানো যায়। এবার তাহলে দেখে দেয়া যাক সবুজ চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো।
ওজন কমানো:-
সবুজ চা মেটাবোলিজম বাড়ায়। সবুজ চায়ে পলিফেনল আছে যা শরীর অক্সিডেশন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাড়তি ক্যালোরি ক্ষয় হয় এবং শরীরের ওজন কমে। নিয়মিত চিনি ছাড়া সবুজ চা পান করলে বেশ খানিকটা ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব। প্রতিদিন ৪ কাপ সবুজ চা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ৬৭ ক্যালরী পোড়ানো যায় যা প্রায় ২০ মিনিট হাটার সমান। তাই দিনে অন্তত ৩/৪ সবুজ চা পান করতে বলে থাকে গবেষকরা।
ডায়াবেটিস:-
নিয়মিত সবুজ চা পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সবুজ চা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
হার্টের সমস্যা:-
বিজ্ঞানীদের মতে সবুজ চা রক্ত কণিকার কার্যক্ষমতা বাড়ায়, এগুলোকে শিথিল রাখে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। সবুজ চা রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমিয়ে দেয়। ফলে হার্টের সমস্যা ও স্ট্রোকের ঝুকি কমে। যারা দিনে অন্তত এক কাপ সবুজ চা খায় তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি অন্যদের তুলনায় শতকরা ৪৪ ভাগ কম।
ক্যান্সার:-
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমান পাওয়া গেছে যে সবুজ চা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। সবুজ চা টিউমার প্রতিরোধ করে। প্রোস্টেট ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, মূত্রথলীর ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে সবুজ চায়ের তুলনা নেই।
কোলেস্টেরল:-
মানুষের শরীরে দুই ধরণের কোলেস্টেরল থাকে। একটি উপকারী কোলেস্টেরল এবং আরেকটি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল। নিয়মিত সবুজ চা পান করলে দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে নিয়মিত সবুজ চা সেবন করলে উপকার পাওয়া যাবে।
দাঁত ক্ষয়:-
গবেষণায় দেখা গেছে যে সবুজ চায়ে বিদ্যমান ক্যামিকেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘ক্যাটেচিন’, মুখে ইনফেকশন সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে দেয়। সবুজ চা খেলে দাঁতের ক্ষতিকর জীবাণুগুলোও ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়াও নিয়মিত সবুজ চা পান করলে মুখের গন্ধ কমে যায়।
ত্বক:-
নিয়মিত সবুজ চা সেবন করলে চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি কার্যক্রমের জন্য ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দেরীতে পড়ে। সবুজ চায়ে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তাই নিয়মিত সবুজ চা সেবন করলে রোদে পোড়ার ক্ষতির থেকে ত্বক কিছুটা হলেও রক্ষা পায়।