ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭, ০৭:২১ এএম
সুখী দাম্পত্য জীবন সকলেই চায়। কিন্তু চাইলেই তো আর জীবনে সুখ পাওয়া যায় না। সুখী দাম্পত্য জীবন পেতে গেলে তার কতগুলি শর্ত মেনে চলতে হয়। এই শর্তগুলি মানলেই জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। এক সংসারে থাকতে গেলে হাতা আর খুন্তির মধ্যে কিছু ঠোকা ঠুকি তো লাগবেই। কিন্তু তা বলে একসঙ্গে থাকব না বললে কীভাবে চলবে! অনেকেই বলেন, বিয়ের পর ভালোবাসা কমে যায়। সবচাইতে সমস্যা বেশি সৃষ্টি হয় যারা প্রেম করে বিয়ে করে। দাম্পত্য জীবনে পা দেয়ার পরই সংসারে ফাটল ধরতে দেখা যায়। একে অপরকে দোষাদোষী করতে বেশী দেখা যায়। পারিবারিকভাবে বিয়ে করলেই যে দাম্পত্য জীবনে সুখ চলে আসে তা কিন্তু বলা যাবে না। তাহলে দাম্পত্য জবীনের সুখ আসলে কোথায় লুকিয়ে থাকে? কোনো দম্পতিই কী সুখী নন? মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে। পৃথিবীতে অনেক দম্পতিই আছেন যারা দাম্পত্যজীবনে অনেক সুখী। দাম্পত্য জীবনেও সুখে থাকা যায়। আপনি জানতে চান কী সেই গোপন রহস্য? চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক।
১. একটু ছাড় দুপক্ষ থেকেই:
দুজনকেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে ১০০% ছাড় দিতে হবে বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। কোনো একটি ব্যাপারে দুজনেই যদি নিজের মতামত থেকে একটু সরে এসে ৫০% করেও ছাড় দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দুজনের মতের মাঝামাঝিতে নিয়ে কাজটি করতে পারেন তাহলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ঝগড়া তো দূরের কথা সামান্ন মনোমালিন্যও হয় না। সুখে থাকেন দুজনেই।
২. একে অপরকে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবা:
আপনি নিজেই বলুন যদি কেউ আপনার কানের কাছে সবসময় বলতে থাকে ‘তোমার জন্য আপনার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমার জীবনের দুর্ভাগ্য তুমি’ তাহলে কেমন লাগতে পারে। অবশ্যই খুব খারাপ। বিষয়টি সেরকমই। দুজন মানুষ যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তখন ভাবা উচিত তাদের ভাগ্যে ছিল বলেই দুজঙ্কে পেয়েছেন। আর নিজের ভাগ্যকে খারাপ বলে নিজেকেই নিচু করার মধ্যে বীরত্বনেই। বরং নিজেকে ভাগ্যবান ভাবা উচিত যে সৃষ্টিকর্তা তার জন্য কাউকে পাঠিয়েছেন।
৩. একসাথে সময় কাটানো:
জীবনে কাজ করার বহু সময় পাবেন। ভবিষ্যতের কথা ভেবে যে বর্তমানে নিজেকে কাজে ডুবিয়ে সঙ্গীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন তার ভবিষ্যৎ কি তা একবার ভেবে দেখেছেন? বিয়ের পর যে সময়টুকু দুজন দুজনকে দেয়ার প্রয়োজন তার মাধ্যমেই সম্পর্কে মধুরতা আসে সম্পর্ক মজবুত হয়। এই সময়টুকু হেলায় পার করে দেয়ার পর দাম্পত্য জীবনে সুখ খোঁজা আপনারই ভুল।
৪. সম্পর্ক ধরে রাখতে কাজ করা:
বিয়ের পর যদি মনে করেন সে তো এখন আমারই, তার প্রতি এখন আর কিছুই প্রমান করার নেই তাহলে ভুল ভাবছেন। সম্পর্ক গড়ে তোলার চাইতে টিকিয়ে রাখা কঠিন। আপনি যদি দায়সারা ভাবে সম্পর্কে নিজের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে নিজেও সুখ পাবেন না সঙ্গীকেও সুখে রাখতে পারবেন না। সম্পর্ককে ধরে রাখতে অবশ্যই আপনাকে কাজ করতে হবে। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে।
৫.রাগকে সঙ্গে করে বিছানায় যাবেন না:
মাথা গরম তো সকলেরই হয়। কিন্তু তা বলে এক মুখ রাগ নিয়ে বিছানায় গেলে কখনওই দাম্পত্য আর সুখীর আখ্যা পাবে না। তাই বিছানায় যাওয়ার আগেই নিজের রাগকে থিতু করে তবেই বিছানায় যান।
৬.একে অপরকে চিনুন:
বিয়ের ক্ষেত্রে একে ওপরকে চেনাটা খুবই জরুরি। মতানৈক্য হতেই পারে। দুজন আলাদা মানুষ, তাদের আলাদা চিন্তা ভাবনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার জেরে যদি বাড়িতে কাক আর চিল বসতে না পারে তাহলে কিছুই করার নেই। তাই এক অপরের কথা শুনুন এবং পরে মাথা ঠান্ডা হলে অপরকে বুঝিয়ে বলুন, দেখবেন ঝামেলা মিটে যাবে।
৭. ক্ষমা করতে শিখুন:
ভুল মানুষ মাত্রই হয়ে থাকে। তবে সেই ভুলটাকে ধরে বসে থাকবেন না। মাথা ঠান্ডা করে স্বামী অথবা স্ত্রীকে ভুলটা ধরিয়ে দিন। তারপর তাকে ক্ষমা করে দিন। ক্ষমা করার ওপরে কোনও কথাই থাকতে পারে না। ক্ষমা করার পর এই ভুল নিয়ে আর কখনওই কোনও কথা বলবেন না। ভুলের কথা সম্পূর্ণভাবে ভুলে যান।
৮.চুপ করে থাকতে শিখুন:
চুপ করে থাকা একটা বড় কাজ। বিবাহিত জীবনে মাঝে মধ্যে চুপ করে থাকলে কিছুই যায় আসে না। তাই একজন বেশি কথা বললে নিজে একটু চুপ করে থেকেই দেখুন না কি হয়!
৯. সদা আনন্দে থাকুন:
নিজের বাবা-মাকে এতো দিন রাগ দেখিয়েছেন বলেই যে বউ অথবা স্বামীর ওপরেও রাগ দেখাবেন সব সময় তা কখনওই নয়। ঝগড়া করার সময় ঝগড়া করার পর মিটিয়ে নিয়ে, বেশিরভাগ সময়ই মুখে একটা প্লাস্টিক হাসি লাগিয়ে রাখুন দেখবেন দাম্পত্য জীবনের চাকা গড়গড়িয়ে ঘুরবে।
১০.ছেলেরা বউয়ের নিয়ম মেনে চলুন:
বিয়ের আগে মায়ের বারণ শোনেননি বলে যে বিয়ের পরে বউয়ের বারণকেও চোখ রাঙাবেন তা কখনওই চলবে না। সদা বাড়িতে বউয়ের বারণ শুনে চলবেন। ধরুন আপনার স্ত্রী ঘর গুছিয়ে রাখার বাতিক আছে। কিন্তু আপনি ঘর গোছানো থাকলে কোনও জিনিস ঠিক ঠাক খুঁজে পাননা। কিন্তু কি আর করবেন তাঁর মতে কদিন চলেই দেখুন না। আস্তে আস্তে স্বভাব পরিবর্তন হয়ে যাবে আপনারও।
১১. অফিসের কাজ কখনওই বাড়িতে নয়:
অফিসের কাজ কখনওই বাড়িতে করবেন না। অফিসের যাবতীয় চিন্তা ভাবনা এবং ফেলে আসবেন অফিসের মধ্যেই। তাকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে এসে নিজের কাছের মানুষদের ওপর রোজ ওই রাগ দেখালে আর দাম্পত্য জীবন টিঁকবে না।
১২. সব সময় বন্ধুত্ব রাখুন:
বিয়ে করেই টিপিক্যাল স্বামী-স্ত্রীতে পরিণত হয়ে যাবেন না। দেখবেন দুজনের মধ্যে যেন বন্ধুত্বটি বর্তমান থাকে। বন্ধুত্ব থাকলেই আর কোনও অসুবিধা হবে না।
১৩. দায়িত্ব নিতে শিখুন:
বিয়ে করেছেন ঘরে মাকে সাহায্য করার জন্য বউ এনে দিয়েছেন বলেই সমস্ত দায়িত্ব নিজের গা থেকে ঝেড়ে ফেলবেন না। সব সময় পরিবারের সকলের দায়িত্ব নিজের। অফিসে কাজের দোহাই দিয়ে ইলেক্ট্রিকের বিল বা ব্যাঙ্কের কাজ এড়িয়ে তা কখনওই বউয়ের ওপর চাপিয়ে দেবেন না।
১৪. নিজের জীবন সাথীর সব থেকে বড় চিয়ারলিডার হন:
যে কোনও খারাপ সময়ের জন্য নিজের জীবনসাথীকে কখনওই দায়ী করবেন না। যদিও আপনি জানেন তিনিই দায়ি। সেই খারাপ সময় তাঁর পাশে দাঁড়ান। তাঁর সব থেকে বড় শক্তি হয়ে উঠুন। যখন সারা দুনিয়া আপনার সাথীর অপরদিকে চলে যাবে তখনও তার হাতটাকে শক্ত করে ধরে থাকুন। দেখবেন কোনও দিন টলমল করবে না সম্পর্কের সেতু।
১৫. মিথ্যে কথা বলতে শিখুন:
বিবাহিত জীবনে সব সময় সত্যি কথা কখনওই বলবেন না। কোনও ভালো কাজ করতে গেলে যদি মিথ্যে কথা একটু আধটু বলতেও হয় তাহলে কোনও ভুল হয় না। ধরুন আছেন বন্ধুদের সঙ্গে একটি পার্টিতে সেখানে বলতেই পারেন অফিসের একটা খুব জরুরি মিটিং-এ আছেন।
১৬. বন্ধুদের সুখ্যাতি একদম নয়:
নিজের পরম বন্ধুর সুখ্যাতি করা একদম ভুলে যান। বন্ধুকে কখনওই নিজেদের ব্যাক্তিগত জীবনের মাঝখানে স্থান দেবেন না।
১৭সারপ্রাইজ দিন:
বিয়ের বহু বছর পরেও যাতে প্রেম আপনাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে না তার জন্য একে ওপরকে সারপ্রাইজ দিন। দেখবেন এই সারপ্রাইজের মাধ্যমেই আপনাদের মধ্যেকার প্রেম নতুন ভাবে জেগে উঠবে।