Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

সত্যিই কী আছে গহনা গ্রাম?

জানুয়ারি ৬, ২০২১, ১০:২০ এএম


সত্যিই কী আছে গহনা গ্রাম?

গলায় জড়োয়া হার, কানে ঝুমকো, হাতে চুরি, আর তাতেই মুহুর্তে কেউ হয়ে উঠে অপরূপা। যুগে যুগে এভাবেই নারীর সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়েছে গহনা। রাজধানীর মার্কেট গুলোতে নানা সুক্ষ নকশায় তৈরি এসব গহনা হার মানায় সোনার চৌলুসকেও। কিন্তু এতো সুন্দর শিল্প কর্মের শিল্পী কারা। এর উত্তর খুজতে গিয়েছিলাম ঢাকারে অদূরে সাভারের ভাকুর্তা গ্রামে। 

আমিন বাজার থেকে তুরাগ নদীর উপরে সেতু পথে গেলে এর দুরুত্ব হবে মাত্র ৫ কিলোমিটার। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে অবস্থিত গ্রামীণ জনপদ ভাকুর্তার প্রবেশ মুখে চোখে পরে প্রাচীন একটি জনপদ। সেই বট গাছ ঘেষেই গড়ে উঠেছে ভাকুর্তা বাজার।

খুব অবাক করার বিষয় হলেও সত্যি ভাকুর্তা বাজারে গৃহস্থলীর নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসের দোকান নেই। সেখানে আছে শুধু সারি সারি গহনার দোকান। দোকানীরা সাজিয়ে বসেছেন হাজারো নকশার গহনা। গহনার কারবার করার জন্য কখন যে ভাকুর্তা, গহনা গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে তা কেউ বলতে পারে না।

গহনার দোকান গুলো কোনোটা পাকা, আবার কোনোটা টিনের ছাপড়া। সেখানে উজ্জ্বল আলোয় উকি দিচ্ছে আগুনের ফুলকি। একটু বসলেই কানে ভেসে আসে শুধু গহনা তৈরির ঠুকঠাক শব্দ। প্রতিটি ঘরের উঠানে, ঘরে, বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গহনা তৈরির সরঞ্জাম। পুরো গ্রামেই যেন চলছে গহনা তৈরির কর্মযজ্ঞ। 

এই গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ , নারী থেকে পুরুষ, সবার একটাই পেশা। পায়ের নক থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নারীকে সজ্জিত করার সব রকমের অলংকার রয়েছে ভাকুর্তা বাজারে। 
সিতাহার, মানতাশা, চুর, বালা, চুড়ি, নোলক, নুপুর, ঝুমকো, বিছা, বাজু, আংটি, টিকলি কী তৈরি করে না ভাকুর্তা গ্রামের গহনা কারিগররা। আবার দাম কম হওয়াতে এসব অলংকারের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

তাদের তৈরি গহনা গুলো পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় ২০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। দাম নির্ভর করে ডিজাইন ও আকারের উপর। যেমন গলার নেকলেস  ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, সীতাহার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, চুরি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা জোড়া।

তবে এই গহনা গুলোই ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২ থেকে ৩ গুন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় সব বড় বড় শপিংমল যেমন চাঁদনিচক, নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট বসুন্ধরা সিটি শপিংমলসহ সব মার্কেটেই গহনা আসে ভাকুর্তা থেকে। সারা দেশের গহনা ব্যবসায়ীরা ভাকুর্তা থেকে গহনা পাইকারি নিয়ে যায়। 

শুধু দেশে নয় এখানকার গহনার চাহিদা রয়েছে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও। ভাকুর্তার তৈরি গহনা রপ্তানি হচ্ছে মধ্যে প্রাচ্যে, ভারত ও ইতালীতেও। এখানকার কারিগররা প্রথম দিকে সোনার গহনা তৈরি করলেও ধীরে ধীরে সোনার দাম চড়া হওয়ার কারনে এখন তামা, পিতল, দস্তা দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন নকশার গহনা। 

যুগ যুগ ধরে এখানকার কারিগররা এই একিই ব্যবসা করে যাচ্ছে। কেউবা পৈতিকভাবে করে যাচ্ছে, কেউবা অন্যের দেখে নিজেই শুরু করেছেন গহনা কারবার। তেমনি একজন কারিগর সাইফুর রহমান। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে গহনা বানানো দেখে নিজেই এখন গহনা দোকানের মালিক।

তবে এই গহনা শিল্পীদের বড় একটি আপসোসের জায়গা হচ্ছে তাঁরা গহনা তৈরি করেন অনেক কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি হয় না। তাদের ধারনা ভারত থেকে গহনা আমদানি কিংবা এখানকার যে বর্ণনাতীত খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থা তাদের আশানুরুপ গহনা বিক্রি না হওয়ার জন্য দায়ী।

তবুও সব কিছু উপেক্ষা করে শিল্পীরা নিজেদের জীবনকে একটুখানি সাজিয়ে তোলার জন্য দিন রাত এক করে অলংকার বানিয়ে যাচ্ছেন অন্যকে সজ্জিত করার জন্য। 

[embed]<iframe width="727" height="409" src="https://www.youtube.com/embed/WVWQ33XOI80" frameborder="0" allow="accelerometer; autoplay; clipboard-write; encrypted-media; gyroscope; picture-in-picture" allowfullscreen></iframe>[/embed]

আমারসংবাদ/এডি