Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ছোট গল্প : বিবর্ণ দুপুর

দিপংকর দাশ

অক্টোবর ২২, ২০২০, ১২:৪৫ পিএম


ছোট গল্প : বিবর্ণ দুপুর

বর্ণাঢ্য বিয়ে বাড়ি। নানারঙের ঝলমলে বাতির আলোতে রঙ্গিন হয়ে উঠেছে। হঠাৎ করে শিমুলের সাথে দেখা হলো বন্দিতার। বন্দিতার গায়ের রঙ ঈষৎ কালো, চুল মোটামুটি লম্বা, চিকন পাতলা ঠোঁট আর গালে একটা ছোট কালো তিল। শিমুল ওই ছোট্ট তিলের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায়। বন্দিতা যখন হাসে মনে হয় আকাশের গা থেকে এক টুকরো চাঁদ এই বুঝি খসে পড়লো। শিমুল অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে বন্দিতার দিকে। বন্দিতা অনেকক্ষণ ধরে বিষয়টি লক্ষ্য করছিলো। বিয়ে শুরু। বরকে ঘিরে সাত পাক দিচ্ছে বধূ। পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণে ব্যস্ত। সবাই গাঁদা ফুল ছিঁড়ে এর পাঁপড়ি ছিটাচ্ছে বর বধূর উপর। আর শিমুল ব্যস্ত বন্দিতাকে নিয়ে। চোখ যেন কিছুতেই সরছে না তার। আড়চোখে বন্দিতাও বেশ দেখছিলো। বিয়ের কার্য শেষ। সবাই ঘরের দিকে যাচ্ছে। বন্দিতাকে হালকা করে ডাক দিলো শিমুল।

শিমুল:
বন্দিতা:

শিমুল: এই যে শুনছেন?
(বন্দিতা শুনেও না শুনাত ভান করে ধীরে ধীরে হাঁটছে। এবার শিমুল আর ডাকলো না। সোজা গিয়ে পথ আটকে তার সামনে দাঁড়ালো। )
শিমুল: এই যে শুনুন।
বন্দিতা: কী? পথ আটকালেন কেন?
শিমুল: কিছু মনে করবেন না। আপনার জন্য এই গোলাপ ফুলটি এনেছি ওই কুঞ্জ থেকে ছিঁড়ে। যদি নিতেন খুশি হতাম।
বন্দিতা: আচ্ছা দাও। তবে অন্য কিছু ভেবে নয়।
শিমুল: আরে না না। নিবেন এতেই খুশি। ভাবার কী আছে!
বন্দিতা: দেন। বাই দ্য ওয়ে, আপনার নামটা কী?
শিমুল: শিমুল।
বন্দিতা: ওকে। ধন্যবাদ।

এই বলে বন্দিতা ঘরে চলে গেলো। শিমুলের মনের ভেতর আচমকা এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। বর পক্ষের খাওয়া-দাওয়ার পর শিমুল খেতে বসেছে। খাবার টেবিলে বসে সে অবাক হয়। আরে একি! আমার বিপরীত টেবিলে বন্দিতা! ওহ মাই গড। আমার মনের মধ্যে একেবারে ঝেঁকে বসে আছে, ভাবতে থাকে শিমুল। বন্দিতা একবার ওর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। ব্যস্, শিমুলের পেট ও মন দুটোই ভরে গেলো। এবার তার মনে সাহস আসে, বন্দিতাকে সে কিছু একটা বলেই দেবে। কিন্তু কী উপায়ে?

পরের দিন বর বিদায়ের পালা। সবাই উপস্থিত, কিন্তু বন্দিতা নেই। শিমুল বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। হঠাৎ বন্দিতা হাজির। হালকা গোলাপি লিপস্টিক মাখা ঠোটখানি যেন হাতছানি দিচ্ছে শিমুলকে। বর বিদায় শেষে আবার বন্দিতার সামনে শিমুল।

শিমুল: আপনার সাথে কথা বলার ছিলো।
বন্দিতা: কী কথা?
শিমুল: মানে, ইয়ে। মানে?
বন্দিতা: এসব কী? সোজাসুজি বলো।
শিমুল: যদি আপনার না....ম....বার...টা দিতেন।
বন্দিতা: কী হবে তাহলে?
শিমুল: না এমনি। কথা বলতাম আর কী।
বন্দিতা: শুধুই কথা?
শিমুল: না মানে, হ্যাঁ।
বন্দিতা: এর বেশি কিছু না কিন্তু। এই নাও।

নাম্বার দিয়ে চলে যায় বন্দিতা। শিমুল একটু পর ফোন দেয় তাকে। ওপাশ থেকে- হ্যালো, কে বলছেন?
শিমুল: শিমুল।
ফোনের ওপাশে: সরি। রং নাম্বার।

শিমুল অবাক হয়। আমাকে চিনলো না? নাকি ওটা অন্য কেউ ছিলো? যাই হোক রাতে ফোন দেবো। রাতে আবার ফোন দেয় শিমুল। আনরিচেবল।
বারবার ফোন দিয়েও একই অবস্থা। এদিকে শিমুকের ঘুম আসে না। সারা রাত ফোন দিতে থাকে। কিন্তু ফোন আনরিচেবল-ই দেখায়। পরদিন সকালে ফোন আসে শিমুলের কাছে। শিমুল লাফিয়ে উঠে। ফোনটা ধরতে যাবে, ওমনি ফোন বন্ধ হয়ে যায়। চার্জ ছিলো না। চার্জে লাগিয়ে ফোন অন করে শিমুল ফোন দিতে যাবে ওমনি এসে আবার ফোন ঢুকলো।

শিমুল: হ্যালো, বন্দিতা।
বন্দিতা: হ্যাঁ। সারা রাত ঘুমাও নি, তাই না? একটু ঘুমাও। দুপুরে কথা বলব।
শিমুল: একটু তো কথা বলো।
বন্দিতা: দুপুরে বলবো।

শিমুল একটু স্বস্তি পায়। ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঘুম কী আর আসে? কখন দুপুর হবে, অপেক্ষা করতে থাকে। এপাশ ওপাশ করতে করতে অবশেষে দুপুর এলো। শিমুল ফোন দিচ্ছে। রিং হচ্ছে। কিন্তু কেউ রিসিভ করে না। বারবার ফোন দিচ্ছে। কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। অনেকবার দেয়ার পর অবশেষে ফোন রিসিভ হলো। শিমুল হতাশার স্বরে বলছে - কী হলো বন্দিতা? ফোন ধরছো না কেন? তুমি জানো, আমি কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি? ওপাশ থেকে কেউ একজন বলছে - হ্যালো ভাই। আপনি যেই হোন না কেন আমি এই মোবাইলটি রাস্তায় পড়ে থাকা একটি পার্সে পেয়েছি। পাশেই একটা স্কুটি এক্সিডেন্ট করেছে। হয়তো ফোনটা তারই। আপনি সিটি হাসপাতালে চলে আসুন। আমরা মেয়েটিকে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি। ফোন কেটে গেলো।

শিমুল দৌড়ে সিটি হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে পৌঁছে সে দেখে বন্দিতার রক্তাক্ত দেহ শুয়ে আছে অপারেশন টেবিলের উপর। হাত দুটি ঝুলে আছে। চোখ দিয়ে তখনও জল ঝরছে। শিমুল মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। তার হূদয় হাহাকার করছে আর গুঙিয়ে গুঙিয়ে বলছে, ‘বন্দিতা এই কী সেই বিবর্ণ দুপুর? যার প্রতীক্ষা আমি করছিলাম! তোমাকে আমি অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম বন্দিতা। এখন আর সেসব বলতে পারবো না। শুধু এটুকুই বলব, আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি বন্দিতা, অনেক, অনেক ভালোবাসি।