ইচ্ছা পূরণে ৬৭-তে এসএসসি দিচ্ছেন কালাম

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২, ০২:০৭ পিএম
ইচ্ছা পূরণে ৬৭-তে এসএসসি দিচ্ছেন কালাম

‘শিক্ষা বা শেখার কোনো বয়স নেই’ এই কথাটিই আবারও প্রমাণ হলো আবুল কালাম আজাদের এসএসসি পরীক্ষায় বসার মধ্য দিয়ে। ৬৭ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার রাহিলা কাদির উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

তার বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া গ্রামে। ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন আবুল কালাম। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও পরিবারে অভাব অনটনের কারণে তার আর চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এজন্য মনে একটা গোপন কষ্ট সবসময় তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো।

নিজে পড়ালেখা করতে না পারলেও শত অভাব-অনটনের মধ্যেও নিজের তিন ছেলেকে করেছেন শিক্ষিত। তার বড় ছেলে শামসুদ্দিন মৌলভীবাজার জেলার একটি মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক, মেজ ছেলে আরিফুল ইসলাম কামিল পাস করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মরত। 

আর ছোট ছেলে আনিসুর রহমান গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাদের বাড়িতে আগুন লেগে সব কিছুই পুড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে তার আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। কাজের সন্ধানে চলে আসেন ঢাকায়।

চাকরি নেন একটি ডক ইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন দীর্ঘ ২২ বছর। ঢাকায় থাকাকালেই বিয়ে করেন। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে চলে যান সৌদি আরবে। সেখানে প্রবাস জীবন কাটান ১৮ বছর।

২০১৩ সালে শ্রীবরদী গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। বাড়ি এসে আবুল কালাম আজাদ ছড়া, কবিতা ও গান লেখায় মনোনিবেশ করেন। 

এলাকায় তাকে সবাই কবি কালাম হিসেবেই জানে। উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ইতোমধ্যে তার দুটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি রচনা করেছেন ২৭টি কবিতা। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও লিখেছেন পাঁচটি কবিতা। দেশের উন্নয়ন নিয়েও লিখেছেন কবিতা।

লংগরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল রশিদ মণ্ডলের ছেলে আবুল কালাম আজাদ নতুন করে পড়ালেখা করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, শেষ বয়সে এসে ছেলেদের সহযোগিতায় তিনি পড়ালেখা শুরু করেছেন। 

এলাকার অনেকেই প্রথম প্রথম হাসাহাসি করলেও এখন আর কেউ এমনটি করে না। বরং আমার এমন আগ্রহে এলাকার অনেক তরুণরাও পড়ালেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

তিনি বলেন, মহানবি (সা.) শিক্ষা গ্রহণের জন্য চীন দেশে যেতে হলেও যেতে বলেছেন। তাই আমি আমার ইচ্ছাটা শেষ বয়সে হলেও পূরণ করতে চাই। 

আবুল কালাম আজাদ বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাই স্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হন। 

এখন চলছে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষার মাধ্যমে তার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবে।

এলাকার তরুণ শিক্ষার্থী খাইরুল ও রতন বলেন, আমরা তরুণ বয়সেও পড়ালেখা করতে চাই না। আর কালাম দাদা বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তার মাধ্যমে আমরাও পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হব।

আবুল কালাম আজাদের মেজ ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের তিন ভাইকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।

তার নিজের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। আমরা এখন তার ইচ্ছাপূরণের জন্য কাজ করছি। বাবার যতটুকু পড়তে মন চায় আমরা পড়াব।’ পড়ালেখা না করেও কবিতার বই প্রকাশ করেছেন। শেষ বয়সে পড়ালেখা শুরু করে এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছেন তার বাবা। এ খবরে আমরাও খুবই আনন্দিত।

খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বলেন, গ্রামে তিনি কবি কালাম নামেই পরিচিত। তিনি যে শেষ বয়সে এসে ধৈর্য ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন, এতে আমরা খুব খুশি। আমরা তার সফলতা কামনা করছি। সুত্র: আরটিভি

 

টিএইচ