মাগুরায় মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বিরুদ্ধে মানববন্ধন

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২, ০৮:৩৪ পিএম
মাগুরায় মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বিরুদ্ধে মানববন্ধন

মাগুরা সদরের হাজিপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামে হাজী মতিয়ার রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ।

বর্তমান কমিটির বয়োবৃদ্ধা সভাপতির পুলিশ অফিসার ছেলের কুটকৌশলে স্কুলের ক্ষতি রোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায় এলাকাবাসি। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্কুলের সামনে এ মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অভিভাবক টিপু বিশ্বাস, মীর আলম, কাঠু মীর, ছাত্র সৈয়দ তামিম আলী, ইসমাইল, ইভা, তুরা, জেরিন ও তমাসহ অন্যরা।

বক্তারা জানান, ২০১৬ সালে এ বিদ্যালয়ে সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় ওই গ্রামের বাসিন্দা নৌ পুলিশের সাবেক এসপি আব্দুল্লা আরেফ বিপ্লব (বর্তমানে ওএসডি সংযুক্ত) প্রভাব খাটিয়ে তার মা সৈয়দা নাদিরা লাইজু কে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনিত করেন। ২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারী স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়।

এ উপলক্ষে যাচাই বাছাই শেষে ৩০৩ জন ভোটার সম্বলিত একটি চূড়ান্ত ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু চতুর আরেফ তার মাকে সভাপতি হিসেবে বহাল রাখতে প্রধান শিক্ষকের উপর প্রভাব বিস্তার করে ওই তালিকার ২৫১ নং সিরিয়ালের মোঃ আবুল বাশার মোল্যা, গ্রাম ধলফা বগুড়ার স্থলে মোঃ আবুল কাশেম গ্রাম লক্ষীকোল উল্লেখ করে একটি ভুয়া খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করান। আবুল বাশার মুলত সভাপতি নাদিরা লাইজুর পক্ষের লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ দ্বিতীয় তালিকাটি নিয়ে নির্বাচনের আগের রাতে আবুল বাশারকে দিয়ে মাগুরা আদালতে একটি মামলা দায়ের করে নির্বাচন স্থগিতের চিঠি ইস্যু করান।

এলাকাবাসি বলেন, আমরা সবাই যে ভোটার তালিকা হাতে পেয়েছি সেখানে আবুল বাশার মোল্যা নাম থাকলেও একটিমাত্র ভোটার তালিকায় একই সিরিয়ালে নাম ও গ্রাম বদলে দিয়ে তাকে দিয়েই মামলা করিয়ে বিনাভোটে ৪ বছর স্কুলের সভাপতি রয়েছেন নাদিরা লাইজু। তারা কুটকৌশলে অনন্তকাল ধরে কমিটির নেতৃত্ব করতে চায়। অবিলম্বে এ সমস্যা সমাধানের জন্য তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। 
প্রসঙ্গত তারা জানান, সম্প্রতি স্কুলের বেশ কয়েকটি নিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে প্রতি পদের বিপরীতে ১০ লাখ টাকা করে টাকা হেকেছেন এসপি আরেফ। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকাও নেয়ার অভিযোগ করেন তারা।

বক্তারা জানান, ধুর্ত আরেফ এর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে অন্যের জমি দখল, প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি, পুলিশের উপস্থিতিতে বিরোধপূর্ণ জমি দখল, মাদক ব্যবসায়ীকে দিয়ে নিজ বাড়ির দেখভাল করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাদিরা লাইজু ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ আরেফ বিপ্লবকে বারংবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে ফুলবাড়ী এইচ. এম আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা স্বীকার করে জানান, ২০১৮সালে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের কয়েকদিন আগে সভাপতি মহোদয় স্কুলের বেশকিছু অফিসিয়াল প্যাড আমার কাছ থেকে নেন। আমি ভোটার তালিকা প্রকাশ করলে তিনি পুরো তালিকার অন্য সবকিছু অবিকল রেখে শুধু ২৫১ নং সিরিয়ালের মোঃ আবুল বাশার মোল্যার নাম ও গ্রামের নামে পরিবর্তন করে আর একটি ভোটার তালিকা আমার কাছে আনেন।

এ সময় তিনি ও তার ছেলেসহ বেশকয়েকজন ব্যক্তি আমার কাছে এসে জোরপূর্বক নতুন তালিকায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন। বাধ্যহয়ে আমি ওই তালিকায় সই করি। পরে বুঝতে পারি ওই তালিকাটিকে ব্যবহার করেই মামলার ফাঁদে ফেলে কমিটি স্থগিত করে রাখা হয়েছে।

তবে এ বিষয় ৩০ সেপ্টেম্বর মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আলমগীর কবির দৈনিক আমার সংবাদের এক সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি, অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনিভাবে তদন্ত করে দেখা হবে।

কেএস