করতোয়ায় দৃষ্টিনন্দন ‘ওয়াই ব্রিজ’ নির্মাণ হবে: রেলমন্ত্রী

পঞ্চগড় প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২২, ০৪:১২ পিএম
করতোয়ায় দৃষ্টিনন্দন ‘ওয়াই ব্রিজ’ নির্মাণ হবে: রেলমন্ত্রী

পঞ্চগড়ে বোদায় মাড়েয়া এলাকায় করতোয়া নদীতে দেশের বৃহত্তম ‘ওয়াই ব্রিজ’ হবে-বললেন রেলমন্ত্রী এডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি রবিবার বিকেলে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে নৌকাডুবির ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  

রেলমন্ত্রী বলেন, আমার সংসদীয় আসনে বোদা মাড়েয়া এলাকার মানুষদের দীর্ঘদিনের দাবি, আউলিয়া ঘাটে একটি ব্রিজের। আমি এমপি হওয়ার পর কথা দিয়েছিলাম এখানে সেতু হবে। ইতোমধ্যে এখানে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে পাস হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রথম ওয়াই ব্রিজ হয়েছে কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুরে। সেটি ছোট। আর পঞ্চগড়ে বোদা মাড়েয়ায় ওয়াই ব্রিজটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় ব্রিজ। এটি মাড়েয়া থেকে কালিয়াগঞ্জ, অপরটি সংযোগটি হবে বড়শশীতে। ব্রিজের নকশা তৈরি করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। আগামী শুক্রবার বুয়েট থেকে ১০ সদস্যের একটি টিম আসছে বোদার এই আউলিয়া ঘাটে। এসে তারা জানানোর পর স্টিমেট হবে। স্টিমেট হলে দরপত্র হয়ে গেলেই আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু হবে।

জানা গেছে, পঞ্চগড়ের মাড়িয়াগঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ দুটি ইউনিয়নকে পৃথক করেছে করতোয়া নদী। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীরা। বোদা উপজেলায় যাতায়াত করতে প্রতিদিন হাজারও মানুষ মাড়েয়া-কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের বিভাজন করা করতোয়া নদী পার হয় ডিঙ্গি নৌকায়। নৌকাগুলো চলে স্যালো মেশিনের মাধ্যমে। এসব নৌকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছর বোদার মাড়েয়ায় বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার দিনে বিশেষ পূজা অর্চনার আয়োজন করা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, সীতার ১৬টি খণ্ডের একটি খণ্ড এ মন্দিরে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই মন্দিরে পূজা দিতে আসেন অগণিত মানুষ। দীর্ঘ দিন ধরেই মাড়েয়া, কালিয়াগঞ্জ থেকে করতোয়া নদী পার হয়ে এ বদেশ্বরী মন্দিরে আসতে মাড়েয়া ইউনিয়নের এই আউলিয়া ঘাট ব্যবহার করা হচ্ছে।

নানা ভোগান্তি নিয়ে নদী পারপার করে আসা দুই পাড়ের মানুষজন একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। গত বছর রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন ঘাটটি পরিদর্শন করে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারও আগে ২০১৮ সালে ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বিশেষজ্ঞ দল আউলিয়ার ঘাট এলাকায় পানি ও নদীর গতিপথ নির্ণয় ও সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিলেন বলে জানা যায়।

বিশেষজ্ঞ দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে সেতু নির্মাণের জন্য দুটি সাইট সিলেকশনও করেছিলেন। এর মধ্যে একটি বদেশ্বরী মন্দির থেকে সোজা পশ্চিমে, অপরটি বর্তমান আউলিয়া ঘাট এলাকায় ওয়াই ডিজাইনের। করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের এই বিশেষজ্ঞ টিমে সদস্য হিসেবে ছিলেন প্রফেসর ড. শাহজাহান মণ্ডল, প্রফেসর ড. সুজিত কুমার বালা, প্রফেসর ড. জিএম তরিকুল ইসলাম।

স্থানীয়রা বলছেন, মাড়েয়া-কালিয়াগঞ্জ মধ্যকার বিভাজন করা করতোয়া নদীতে একটি সেতু থাকলে আজ স্মরণকালে এমন ভয়াবহ নৌকা ডুবে এত মানুষের মৃত্যু দেখতে হতো না। এ ঘটনায় ৭২ জনের প্রাণ গেছে। ৭২ জনের মধ্যে ৬৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে, বাকি ৩জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।  এজন্য এই শোক থাকতে থাকতেই করতোয়ায় সেতু নির্মাণ চান। রেলমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসের দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন ২৫ জন, দ্বিতীয় দিন ২৬ জন, তৃতীয় দিন ১৭ ও চতুর্থ দিন একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নৌকাডুবিতে মৃত ৬৯ জনের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৫ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের ১ জন রয়েছেন। মৃত ৬৯ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন এবং পুরুষ ১৮ জন। বাকি ২১ জন শিশু।

এসএম