গাইবান্ধায় কাজ করেও মজুরি বঞ্চিত ‘ইজিপিপি’র ৩৫ শ্রমিক!

মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২, ১১:৩৯ এএম
গাইবান্ধায় কাজ করেও মজুরি বঞ্চিত ‘ইজিপিপি’র ৩৫ শ্রমিক!

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ১নং রসুলপুর ইউনিয়নে "অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি" (ইজিপিপি) প্রকল্পে কাজ করেও মজুরি পায়নি ৩৫ জন মাটিকাটা শ্রমিক। ইউনিয়ন পরিষদ, ইউএনও অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জেলা-উপজেলার অফিসে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও মিলেনি কোনো সমাধান। দায় নিচ্ছে না কোন অফিসও। এর মধ্যেই ওই ইউনিয়নে গতকাল শনিবার থেকে চলতি অর্থ বছরে আবারো শুরু হয়েছে এ প্রকল্পের কাজ। এ অবস্থায় গরীবের শ্রমের টাকা কোথায় আর কিভাবে গেল আর কেনইবা কাজ করেও শ্রমিকরা টাকা পাচ্ছেনা, এর দায় কার? বিষয়টি তদন্ত করে অসহায়  এসব গরীব শ্রমিকের মাটিকাটার শ্রমের মূল্য (মজুরি) পরিশোধের দাবি গাইবান্ধার সচেতন মহলের।

তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে "অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি" (ইজিপিপি) প্রকল্পে কাজ করে ২২৪ জন সুবিধাভোগী নারী-পুরুষ শ্রমিক। এরমধ্যে প্রথম দফায় ১২ জন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ জনসহ মোট ৩৫ জন শ্রমিক বঞ্চিত হয়েছেন তাদের কাজের মজুরি পাওয়া থেকে। বেকার, অদক্ষ, ভূমিহীন ও স্বল্প আয়ের এসব শ্রমিক কাজ করেছেন সপ্তাহের পাঁচদিন।

প্রথম দফায় তারা কাজ করে ১২ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় কাজ করে ৪০ দিন। এর মধ্যে ১২ জন শ্রমিকের প্রত্যেকেই এক (প্রথম) দফার কাজের পাবেন ৪ হাজার ৮০০ টাকা। আর দুই দফায় বঞ্চিত হওয়া ২৩ জন শ্রমিকের প্রত্যেকেই পাবেন ২০ হাজার ৮০০ টাকা করে। এদের মধ্যে আবার যারা দলনেতা রয়েছেন তাদের প্রতিদিন ৫০ টাকা মজুরি বেশি হিসেবে তারা প্রত্যেকেই পাবেন ২৩ হাজার ৪০০ টাকা করে। সে অনুযায়ী মজুরি বঞ্চিত হওয়া ৩৫ জন শ্রমিক পাবেন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা।

মজুরি বঞ্চিত হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে একজন সিরাজুল ইসলাম। যার সুবিধাভোগী নম্বর ১০৯। তিনি ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড প্রকল্পের দলনেতা। সিরাজুল ইসলাম প্রথম ও দ্বিতীয় দফা মিলে ২৩ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দলনেতা সিরাজুল বলেন, "আমার ওয়ার্ডে আমিসহ ৬জন শ্রমিক আমাদের মজুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ জন্য আমরা চেয়ারম্যানের কাছে, উপজেলায় পিআইও‍‍`র কাছে, ইউএনও‍‍`র কাছে, গাইবান্ধার অফিসে কয়েকবার করে গেছি। কিন্তু আমরা আমাদের শ্রমের মজুরি পাইনি। এর কারণ আমরা জানিনা। আমরা রোদে পুড়ে কাজ করেছি, টাকার জন্য অনেক হয়রানি হয়েছি, কিন্তু আজও টাকা পাইনি। পিআইও সাহেব আমাদেরকে বলেছেন, "আপনাদের টিকেট আছে, কিন্তু ট্রেন চলে গেছে" এর মানে আমি বুঝিনাই!

এই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নারী শ্রমিক মাজেদা বেগম। তিনিও দুই দফার ২০ হাজার ৮০০ টাকা পায়নি। মাজেদা বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ অভাবের কারণে মাটিকাটা কাজ করছি। ধারদেনা করে খাইছি। কিন্তু কেন টাকা পেলামনা জানিনা। কেউ বলেনি কেন টাকা পাবনা। পিআইও সাহেব আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের শ্রমের দাম চাই। অনেক কষ্ট করে মাটির বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করছি।

রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, আমিও এই টাকার জন্য তাদেরকে নিয়ে কয়েকবার উপজেলায় গিয়েছিলাম। আসলে তারা কেন টাকা পেল না, এটা জানা দরকার। আমিও চাই তারা টাকা পাক। আমি পরিষদ থেকে প্রত্যায়নও দিয়েছিলাম, তবুও ৩৫ জন শ্রমিক টাকা পায়নি। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রেজাউল করিম ইজিপিপির শ্রমিকরা টাকা না পাওয়া বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, প্রথমে তাদের ভুলের কারণে টাকা পায়নি। পরে সংশোধন করে দেওয়ার পর কিছু কিছু টাকা পেয়েছে। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব একাউন্ট ডাচবাংলার মাধ্যমে করা হয়েছে, এসব মন্ত্রণালয়ের বিষয় আমরা বেশি কিছু বলতে পারবোনা। ভাল করে জানতে হলে আপনি পিআইও‍‍`র সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

তবে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক মো: অলিউর রহমান।

এসএম