ভোলায় ১৫ জেলে অপহরণ, মুক্তিপণে ছাড়া পেলেন ৯ জন

তজুমদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৬:০৬ পিএম
ভোলায় ১৫ জেলে অপহরণ, মুক্তিপণে ছাড়া পেলেন ৯ জন

ভোলার তজুমদ্দিনের মেঘনা নদীতে জলদস্যুরা মাছ ধরারত ১৫ জেলেকে অপহরণের ২ দিন পর মুক্তিপণের বিনিময়ে ৯ জন ছাড়া পেয়েছে। শনিবার  তজুমদ্দিন উপজেলার জেলে বাড়ি ফিরে এসেছে। অপহরণের এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত জেলেরা থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চরজহিরউদ্দিন ও চরমোজাম্মল এলাকার মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সময় সশস্ত্র ডাকাতরা অন্তত ১৫টি জেলে-ট্রলারে হামলা চালায়। এসময় দস্যুরা ১৫ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। বিকাশে মুক্তিপণের টাকা পেয়ে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে তজুমদ্দিনের ৯ জেলেকে মুক্তি দিয়েছে ডাকাতদল।

অপহরণের দুইদিন পর বাড়ি ফিরে আসা এসব জেলেরা হলো, উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের উত্তর চাপড়ী গ্রামের অলি আহমেদের ছেলে আলাউদ্দিন, মোতাহারের ছেলে হাসান, আলী মোস্তফার ছেলে সালাউদ্দিন ও শাহজাহানের ছেলে ইউছুফ, চাঁদপুর ইউনিয়নের মাওলানা কান্দি গ্রামের কাশেম মাজির ছেলে লোকমান, আব্দুল মান্নানের ছেলে হান্নান, মহাজনকান্দি গ্রামের আলমগীরের ছেলে আরিফ, বালিয়াকান্দি গ্রামের মোস্তফা মাঝির ছেলে হাসেম ও ভুলাই কান্দি গ্রামের মোস্তফার ছেলে মিরাজ।

বাড়ি ফিরে জেলেরা জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে মুক্তিপণ আদায় করে তাদের ইলিশা মাছ ঘাটের দক্ষিণ পাশে মাঝির ঘাট নামের একটি নির্জন এলাকায় ডাকাতরা নৌকা হতে নামিয়ে দেয়। পরে তারা শনিবার বিভিন্ন সময়ে বাড়ি ফিরে আসলেও বাকীদের সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে এরা অন্য এলাকার হওয়ায় ডাকাতরা তাদের আলাদা স্থানে রাখে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে জানায়, অপহরণের পর তজুমদ্দিনের নয় জেলেসহ ১৫ জনকে ভোলার তুলাতলির পূর্ব পাশে মেঘনার একটি চরে নৌকার মধ্যে বেঁধে রাখে।

শুক্রবার সকালে ভোলার তুলাতলির মাছ ঘাটের শাহিন ও নিরবের মাছের আড়তে ডাকাতিকৃত মাছ ও জাল বিক্রি করা হয়। এ সময় ডাকাতরা শাহিন ও নিরবের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা বলতে শুনেন অপহৃত জেলেরা। মাছ বিক্রির পরে ডাকাতরা আটককৃত জেলেদের ব্যাপক মারধর করে মৎস্য আড়তদার ও স্বজনদের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলতে দেন। এ সময় ডাকাতরা জেলেদের জীবিত ফেরত নিতে এক লক্ষ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে স্বজনদের বলেন পুলিশকে কোন তথ্য জানালে কাউকে জীবিত ফেরত পাবে না।

মৎস্য আড়তদার ও স্বজদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি জেলেকে মুক্তির জন্য ডাকাতরা ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ নিয়েছে। এসব টাকা পরিশোধের জন্য ডাকাতদল তাদের আটটি বিকাশ নম্বরে পাঠায়। এসব নম্বর গুলো হচ্ছে 01791476008, 01791669995, 01877244688, 01758112958, 01315394659, 01788185972, 01717792257, 01811144432 ডাকাতদের দেওয়া এসব নাম্বারে অপহৃতদের স্বজনরা মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করে বলে তারা জানায়।

স্বজনদের দাবী, অপহৃত জেলে পরিবারের কাছে জলদস্যুরা মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করছে। পুলিশি হয়রানীর ভয়ে তারা কাউকে না জানিয়ে অপহৃতদের উদ্ধারে মুক্তিপণ পরিশোধ করছেন।  ঘটনার পর এখন পর্যন্ত অপহৃত জেলে পরিবারের পক্ষ হতে প্রশাসনকে অভিযোগ করা হয়নি বলেও জানা গেছে।

হাকিমুদ্দিন নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন নদীতে পুলিশে নিয়মিত টহল ডিউটি চলছে। আর, অপহৃদের কাছে খোঁজ নিয়ে ডাকাত দলের অবস্থান শনাক্ত করতে কাজ চলছে। আশা করছি, ধরা পড়বে।

তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, অপহৃত ৯ জেলে বাড়ি ফেরার তথ্য পেয়েছি। তাদেরকে আইনগত সহায়তা নেয়ার জন্য বলা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তবে, ডাকাতদের কিছু বিকাশ নম্বর জেলেরা দিয়েছে, আমরা তা যাচাই করে দেখছি।

এসএম