পুলিশের মামলায় আসামি তিন শতাধিক

বাউফলে উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম
বাউফলে উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের ওপর হামলার প্রতিবাদে  শনিবার (১৮ মার্চ) সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।

আজ বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার বগা বন্দরের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে  স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে ওই সংবাদ সম্মেলন করেন চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবের পুত্র বগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা ডুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহমুদ হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহমুদ হাসান অভিযোগ করেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে তাঁর বাবা আবদুল মোতালেব হাওলাদারের নেতৃত্বে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে হাজারো নেতা-কর্মীদের নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ‘জনতা ভবন’ এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার উদ্দেশ্যে আনন্দ র‌্যালি বের করেন।

র‌্যালিটি সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে পৌঁছালে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের উপস্থিত নেতৃত্বে ও হুকুমে তাঁর সন্ত্রাসীবাহিনী তাঁর বাবার ওপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাঁর বাবার ডান পা ভেঙে যায়, কোপের আঘাতে তাঁর ফুসফুস ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ও ডান হাতের তৃতীয় আঙুল কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে থাকে। তিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। মাহামুদ এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে চিহ্ণিত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

এ সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষ একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচির ডাক দেয়। এর মধ্যে সভাপতি আ স ম ফিরোজ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব এই দুটি পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) এবং আরেকটি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগ আরেকাংশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এ কর্মসূচিকে ঘিরে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে দেখা যায়। বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক ওরফে জুয়েলের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি কলেজ মাঠে, সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) সামনে জড়ো হয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে,আবদুল মোতালেবের নেতৃত্বে গত শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দ র‌্যালিটি বের হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিলেন। সোয়া ১১ টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এতে বাধা দেন। তখন পুলিশ ও আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। আর অপর পাশেই লাঠিসোঁটা ও বগিদা নিয়ে অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজের কর্মী-সমর্থকেরা। আ স ম ফিরোজ একটি গাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরাই দলীয় ও নিজ নিজ নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে ছত্রবঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। তখন আবদুল মোতালেবের কর্মী-সমর্থকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হন। একপর্যায়ে আবদুল মোতালেবের ওপর হামলা চালায় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ক্যাডার বাহিনী। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিউতে আছেন বলে তাঁর মেয়ে মোসা. রেশমা জানিয়েছেন।

এদিকে পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশ আহত হওয়ার অভিযোগে নাম উল্লেখ না করে ২৫০-৩০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে মামলা রুজু করেছেন।

এআরএস