দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দীর্ঘদিন থেকেই মোজাম বিনোদন পার্কের আড়ালে প্রকাশ্য অসামাজিক ব্যবসা করে আসছিলেন পার্কটির মালিক মোজাম্মেল হক মোজাম।
বেশ কিছুদিন যাবত স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার (১০ জুন) সকালে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে প্রশাসন।
এতে নেতৃত্বে দেন দিনাজপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলেন ঘোড়াঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান।
ভ্রাম্যমান আদালত বিনোদন পার্কটির মালিক মোজাম্মেল হক মোজামকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান। এছাড়াও আদালত দুজন পতিতা নারী এবং দুজন খদ্দেরসহ আরো চারজনকে ১ মাসের বিনাশ্রম সাজা প্রদান করে।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বলগাড়ী গ্রামের মৃত কফিল উদ্দীন মন্ডলের ছেলে পার্ক মালিক মোজাম্মেল হক মোজাম মন্ডল (৭৪), নবাবগঞ্জ উপজেলার কলমদারপুর গ্রামের মজমুল হকের ছেলে সিদ্দিকুল ইসলাম (২৪), গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার শফিকুল ইসলামের ছেলে সামিউল ইসলাম (১৯) এবং খাগড়াছড়ির মাটিডাঙ্গা উপজেলার বেলছুড়ি গ্রামের মৃত জামাল মিয়ার মেয়ে ময়না আক্তার (২৩) ও বগুড়া সদর উপজেলার বুলু সরকারের মেয়ে সুমা খাতুন (২১)।
জানা যায়, ৩ বছর আগে নিজের বিশাল একটি আমের বাগানকে `মোজাম বিনোদন পার্ক` রূপান্তরিত করার জন্য বুলাকীপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয় মালিক মোজাম্মেল হক। তারপর বাগানটির ভিতরে ১২ রুম বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মান করে প্রকাশ্য সেখানে পতিতাবৃত্তি ব্যবসা করে আসছিলেন। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকবার অভিযোগ দেয়।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশ পার্কটিতে ৩১ বার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে। এতে পার্কটির মালিক এবং তার জামাতাসহ পার্কটিতে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় অর্ধশত পতিতা নারী ৩৫ জন খদ্দেরকে কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালত।
গত বুধবার (৭ জুন) বিকেলেও সেখানে অভিযান চালিয়েছিলো পুলিশ। অভিযানে ৫ পতিতা নারীসহ ৮ জনকে আটক করে অর্থদন্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালত।
জানা যায়, প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানেও অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আইন এবং ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যই তিনি অবৈধ পতিতাবৃত্তি ব্যবসা করে আসছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কিশোরী এবং মধ্যবয়সী নারীদেরকে দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে নিয়ে এসে পাশ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে রাখেন পার্ক মালিক মোজাম্মেল।
পার্কটি থেকে প্রতিদিন সকালে একটি সিএনজি গিয়ে ভাড়া বাড়ি থেকে ৫-৬ পতিতা নারীদেরকে সেখানে নিয়ে আসে এবং সন্ধায় আবারো সিএনজি যোগে পার্ক থেকে ওই নারীদেরকে ভাড়া বাড়িতে রেখে আসা হয়।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান কবির বলেন, সাজাপ্রাপ্ত ৫ জন শনিবার বিকেলে দিনাজপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান বলেন, অশ্লীল কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯৪ ধারায় ৫ জনকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
দিনাজপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, পার্ক মালিকের জমির সকল কাগজপত্র এবং বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনা সংশ্লিষ্ট অনুমোদনের কাগজপত্র আমরা যাচাই করছি। কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে পার্কটির বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এইচআর