কাউনিয়ায় অরক্ষিত রেলগেটগুলো যেন মরণ ফাঁদ

মো. সাইফুল ইসলাম, ( কাউনিয়া ) রংপুর প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৩, ০১:৫০ পিএম
কাউনিয়ায় অরক্ষিত রেলগেটগুলো যেন মরণ ফাঁদ

রংপুরের কাউনিয়ায় অরক্ষিত রেল ক্রসিং দিয়ে ঝুকি নিয়েই চলছে ট্রেন। রেলওয়ের হিসেব মতে ১২টি ক্রসিং এর কথা বলা হলেও এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন কাউনিয়া জংশন ষ্টেশন দিয়ে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ মোট ২৮টি ট্রেন চলাচল করছে।

নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা হওয়ায় রেলে যাতায়তের চাহিদা বেশি। তবে রেল ভ্রমনে এই রুটে ট্রেন যাতায়াতে রংপুর থেকে কাউনিয়া পথেই সড়কে অন্তত ১২টি রেল ক্রসিং এখন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। রেল ক্রসিং গুলোর রাস্তা দিয়ে দিনে ও রাতে বিভিন্ন যানবাহন, মানুষ ও গবাদী পশু চলাচল করলেও রেল ক্রসিং গুলোতে নেই কোন পাহারাদার বা গেটম্যান। কিছু স্থানে সাইনবোর্ড দিয়ে দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ।

ব্রিটিশ আমলে নির্মীত ঐতিহ্যবাহী কাউনিয়া রেলওয়ে জংশন ষ্টেশন উত্তর জনপদের অন্যতম রেল যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম। এ মাধ্যমে রেল পথে সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটসহ রংপুর বিভাগের প্রায় আট জেলার মানুষ ঢাকা ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তে যাতায়াত করে থাকনে।

কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জংশনের আওতায় সড়কগুলোর ১২টি লেভেল ক্রসিংয়ের কোনোটিতে গেট নেই। যেগুলোতে আছে, সেগুলোও চলছে জোরাতালি দিয়ে। 

জংশন স্টেশন থেকে মীরবাগ হয়ে রংপুর স্টেশন পর্যন্ত কাউনিয়া তকিপল বাজার, গের্দ্দো বালাপাড়া, সাব্দী মৌলটারি, শহীদবাগ বাজার, বল্লভ বিষু, সাধু রেল গেট, মীরবাগ বিজলের ঘুন্টি লেভেল ক্রসিং, কাউনিয়া থেকে অন্নদানগর স্টেশন যেতে রেল কলোনি ও পশ্চিম কেবিন, কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থানা রোড, গোপাতী মজির গেট, কুটির পাড় ক্রসিং, কাউনিয়া থেকে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম স্টেশন যেতে পূর্ব কেবিন কুলিপড়া ও পাঞ্জরভাঙ্গা বাধের রাস্তার ক্রসিংয়ে গেট গোটম্যান পাওয়া যায়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়েই মানুষকে এসব ক্রসিং পার হতে হচ্ছে।

কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার হোসনে মোবারক বলেন, ষ্টেশনে ৪১ জন জনবলের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিকসহ ২৮ জন দায়িত্ব পালন করছেন। জনবল সংকটের বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। একাধিকবার চাহিদা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায় পশ্চিমাঞ্চলী রেলওয়ের পাকশী ও লালমনিরহাট ডিভিশনের ১ হাজার ৫৬৮ কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১ হাজার ৪২৩টি, যার মধ্যে ১৭১ টিই অবৈধ। এই সংকটও পূরণ করছে না কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে রেল ক্রসিং ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে বেশী, এ যেন দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি কাউনিয়া তকিপল বাজার রেল ক্রসিংয়ে ট্রেন-অটোচার্জার সংঘর্ষে আটো দুমড়েমুচড়ে চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। রেল ক্রসিংয়ে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা আর প্রাণহানী। এসব অরক্ষিত রেল ক্রসিং এখন মানুষ ও গবাদী পশুর মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে।

এব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিরব-নিশ্চুপ তবুও ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে। গেটম্যান না থাকায় ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত বছর দুর্ঘটনায় বিভাগের আট জেলায় ৫৬ জন নিহত হন। শতাধিক মামলা হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। অনুনোমোদিত এসব সিংন্যালের বেশির ভাগ তৈরি হয়েছে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে। বাকিগুলো তৈরি করেছে স্থানীয়রা। কাউনিয়া উপজেলার লেভেল ক্রসিংয় গুলোতে গেটম্যান তো দূরে থাক, নেই প্রতিবন্ধক বার।

তিস্তা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ্ মোবাশ^ারুল ইসলাম রাজু জানান, এই গেট গুলো দিয়ে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়ত করে থাকে কিন্তু রেল ক্রসিং গুলোতে গেটম্যান না থাকায় দূর্ঘটনার প্রবনতা বাড়ছে। অতি সত্তর এর সমাধান করা প্রয়োজন তা না হলে আরো বড় ধরনের দূর্ঘটনা হতে পাড়ে।

লালমনিরহাট বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান ইতিমধ্যেই ঢাকা থেকে গেটম্যান নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয়া হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব যেসব গেটে গেটম্যান নাই সেখানে গেটম্যান নিয়োগ করা হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বিষয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা পূর্ণেন্দু দেব জানান, রেলের উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। রেল ক্রসিং ঘেঁষে অবৈধ দোকানপাটসহ স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, গেটম্যানদের স্থায়ী করার কাজ চলছে এবং লেভেল ক্রসিংগুলোর গেট মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অতি গুরুত্বপূর্ন স্থানে নতুন করে গেট স্থাপন কার হবে।

এইচআর