কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের প্রতিহত করা হবে: এমপি বাহার

কুমিল্লা প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম
কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের প্রতিহত করা হবে: এমপি বাহার

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত রোববার বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

বিবৃতিতে ‘মদমুক্ত পূজা’ করার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই বিবৃতির প্রত্যুত্তরে এমপি বাহার বলেছেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মের একটি পবিত্র উৎসব, পূজায় সনাতন ধর্মের লোকজনের সঙ্গে সকল ধর্মের মানুষ অংশ নেয়, সেখানে কিছু লোকজন মাদক গ্রহন করে পূজার পবিত্রতা নষ্ট করে, তিনি পূজা চলাকালিন সময়ে কোন ধরনে মাদক গ্রহন না করতে সকলকে আহবান জানান।

এমপি বাহার বলেন, পূজায় ভারতের দিলি-কলকাতায় মাদক নিষিদ্ধ, শুধু আমি বললেই দোষ। আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেন।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, কুমিলা মহানগর শাখা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ জবাব দেন।

এমপি বাহার বলেন, শান্তিপূর্ণ কুমিল্লাকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিছু স্বার্থান্বেষী মহল শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রতিবাদে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে আপনারা কার ষড়যন্ত্রে বিবৃতি দেন? কাউকে মনোনয়ন দেওয়া না দেওয়ার আপনারা কে?

এ সময় তিনি ভারত ও বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক পত্রিকার কাটিং দেখিয়ে বলেন, ‘পবিত্র পূজামন্ডপকে সুশৃঙ্খল রাখতে দিলি কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় পূজা উপলক্ষে মাদক নিষিদ্ধ রাখে। সেখানে দোষ নেই, বাহার বললেই দোষ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পূজা উদযাপনের পূবে আইনশৃংখলা বাহিনী থেকেও পূজা ও মন্দিরগুলোর পরিবেশ সুন্দর রাখতে কোন প্রকার মাদক গ্রহনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’

কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, ‘পূজামন্ডপ ও মাদক নিয়ে আমার খন্ডিত বক্তব্য প্রচার করে করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে কুমিল্লার তথা দেশের রাজনীতিকে ঘোলা করতে চাইছে। কুমিল্লার যত হিন্দু সম্পত্তি অবৈধভাবে হস্তান্তর হয়েছে সবকিছুর সঙ্গে তাঁরাই জড়িত। কোনো চক্রান্তই আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরাতে পারবে না।’

এমপি বাহার বলেন, গত ৫০ বছরের রাজনীতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি মন্দির, পূজা-পার্বনে রাস্তায় থেকে নিরাপত্তা দিয়েছি। কোন হিন্দু মন্দির আক্রান্ত হলে সবার আগে ছুটে গিয়েছি। কুমিল্লা গান্ধি আশ্রম দখলদারদের থেকে মুক্ত করেছি। যারা হিন্দু সম্পত্তি দখল করেছে তারাই আজ ষড়যন্ত্র করছে।

বাহার বলেন, তারা ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র করছে কিন্তু শংকরের কল্লা ফেরত দিতে পারেনি। আজও শংকরের পরিবার তাঁকে খুঁজছে।

তিনি বলেন, কুমিল্লার শান্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকাল বিকেল শান্তি মিছিল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সকালে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আর বিকেলে শ্রমিক লীগ-কৃষক লীগের নেতৃত্বে শান্তি মিছিল হবে। হিন্দু-মুসলিম সবাই এ শান্তি মিছিলে সমবেত হবেন।

কুমিল্লায় মাদকমুক্ত পূজার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, কুমিল্লায় মাদকমুক্ত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। কোনো মাদকাসক্ত যদি মাতলামি করতে মন্ডপে আসে তাকে পুলিশে দেওয়া হবে। পূজার শৃঙ্খলা রক্ষায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ পাড়ায় পাড়ায় পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে কাজ করবে। কোনো প্রকার উচ্ছৃঙ্খলতা মেনে নেওয়া হবে না। আমি কুমিল্লার সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে কুমিল্লা সকল মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছি।

বাবরী মসজিদের ঘটনার কথা স্বরণ করে তিনি বলেন, ওই সময় আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে রাত জেগে মন্দিরগুলো পহারা দিয়েছি। আমি মাদকে বিরুদ্ধে কথা বলেছি, আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশ ন্ষ্ট করে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কোন ষড়যন্ত্রকারিদের ছাড় দেওয়া হবে না।

এমপি বাহার বলেন, কুমিল্লায় কয়েকজন হিন্দু সম্পত্তি দখলকারি ছাড়া সনাতন ধর্মের সকল জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তারা জানে তাদের বিপদের সময় বাহার ছাড়া কেউ পশে থাকে না। কুমিল্লার বাহারই তাদের বিপদের বন্ধু।

এমপি বাহার বলেন, চলতি বছরও প্রতিটি পূজা মন্ডপে আমার কর্মীরা পালাক্রমে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। কোন দূষ্কৃতিকারি কোন প্রকার ষড়যন্ত্র করে পূজার পরিবেশ যাতে নষ্ট করতে না পারে সেদিকে আমি সজাগ থাকবো। এমপি বাহার হুশিয়ার করে বলেন ষড়যন্ত্র করে পূজার পরিবেশ বিনষ্ট করা হলে ষড়যন্ত্রকারিদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিব প্রসাদ রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অচ্যিন্ত দাস টিটুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কান্তি রাহা, পাপড়ী বসু প্রমুখ। সভায় কুমিল্লা মহানগরীর ৯১টি পূজামন্ডপের নেতৃবৃন্দ ও কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সকল নেতৃবৃন্দসহ কুমিল্লা সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বিবৃতির লিখিত প্রতিবাদ জানান পূজা উদযাপন পরিষদ কুমিল্লা মহানগর শাখা।

সভায় ১০১ জন হিন্দু নেতার স্বাক্ষর সংবলিত একটি প্রতিবাদ লিপি পড়ে শোনানো হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের বিবৃতির প্রতিবাদে দেওয়া এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রদত্ত বিবৃতি দেখার পর আমরা হতবাক হয়েছি যে, আমাদের জাতীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের এহেন আচরণ আমাদের মর্মাহত ও হতাশ করেছে। আমরা কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ এবং কুমিল্লা মহানগরের সকল শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন কমিটির পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ সভায় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এআরএস