কাপ্তাই হ্রদে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৩, ০৩:৫৩ পিএম
কাপ্তাই হ্রদে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ কৃত্তিম জলাধার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। প্রায় ১১ হাজার ১২২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরে দেখা দিয়েছে চিন্তা। কেননা কাপ্তাই হ্রদে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে পানির পরিমাণ। যেটি ষাটের দশকে বাঁধ তৈরির পর আগে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

এদিকে কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খোলা না থাকলেও এত পানি কিভাবে কমছে কিংবা কোথায় যাচ্ছে তাই নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কতৃপক্ষের। কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমাতে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, অনান্য বছরের তুলনায় এবছর কাপ্তাই হ্রদে পানি বেশি কমার ফলে নামিয়ে আনা হয়েছে কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন। গত সেপ্টেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট দিয়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৭ কিউসেক পানি অপসারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু রুলকার্ভ অনুযায়ী নভেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ১০৬ এমএসএল থাকলেও বর্তমানে পানি রয়েছে মাত্র ৯৯ এমএসএল। এবং পানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। এত পানি কিভাবে কমছে এনিয়ে ও চিন্তায় পড়েছে কতৃপক্ষ।

এবিষয়ে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কয়সুল বারী জানান, যেহেতু বর্তমানে বছরের এই সময়টা শুষ্ক মৌসুম চলছে। এই সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ আসলে কমে আসে। তবে অস্বাভাবিক পানি কমে আসার অন্য কোন কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কাপ্তাই হ্রদে পানি কমার কোন কারণ আছে কিনা সেটি একটি কমিটি গঠন করে খোঁজ নেওয়া হবে।

কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বছরের বিভিন্ন মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর বাড়ে আবার অনেক সময় কমে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ভাবে কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। অনান্য বছর যে হারে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে এবছর তার পরিমাণ অনেকটা বেশি।

সাধারনত কাপ্তাই হ্রদের পানি ১০৯ এমএসএল পৌঁছালে বাঁধের ঝুঁকি এড়াতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলকপাট খুলে দেওয়া হয়। তবে দুমাস ধরে জলকপাট বন্ধ থাকার পরও অস্বাভাবিক ভাবে পানি কমতে থাকায় হ্রদের পাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের চিন্তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল মানুষের জনজীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে কাপ্তাই জেটিঘাট কিংবা রাঙামাটি সদর লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাভাবিক ভাবে পানি কমতে থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা খাতে। লঞ্চ ও বোট চালকরা বলছেন, প্রতিবছর দুর্গম বাঘাইছড়ি, বরকল, জুড়াছড়ি উপজেলায় ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত নৌযান চলাচল করতে পারতো তবে যেভাবে পানি কমছে এতে চলতি বছরের নভেম্বর এর শেষদিকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বাড়বে জনদুর্ভোগ।

এইচআর