শীতের পিঠা বিক্রির ধুম

সাকিব আলম মামুন, (রাঙ্গামাটি) লংগদু প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম
শীতের পিঠা বিক্রির ধুম

আবহমান গ্রাম বাংলায় শীতের পিঠা গ্রামীণ ঐতিহ্য। শীত মানেই পিঠা-পুলির ঘ্রাণ। কুয়াশা মুড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোঁয়া উঠা ভাঁপা-চিতই পিঠার স্বাদ না নিলে যেন তৃপ্তি মেটে না অনেকের। শীত মৌসুমে গ্রামীণ বধূরা রকমারি পিঠা তৈরি করেন। শীতের পিঠার মধ্যে ভাঁপা পিঠা একটি অন্যতম পিঠা।

শীত এলেই শহর ও গ্রামীণ হাটবাজারে নানা রকম পিঠা বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে ভাঁপা পিঠা, তেলের পিঠা ও চিতই পিঠা। শীত বাড়ার সাথে সাথে ফুটপাতে শীতের পিঠার ব্যবসা জমে উঠে। চুলার অল্প আঁচের ধোঁয়া উড়ছে। গরম গরম ভাঁপা, চিতই নামছে। ক্রেতারা এসে সারিবদ্ধ হয়ে পিঠা কিনছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙামাটির লংগদু উপজেলার অধিকাংশ স্থানে বসেছে অস্থায়ী পিঠা বিক্রির দোকান। অল্প পুঁজি আর কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় পিঠা ব্যবসায় নেমেছেন অনেকেই। উপজেলার মাইনী বাজার, বাইট্টাপাড়া বাজার ও লংগদুসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসছে নারী-পুরুষ বিক্রেতারা।

অনেকেই এই শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রিকে বেছে নিয়েছেন মৌসুমী পেশা হিসেবে। বেচা-কেনাও বেশ ভালোই চলে। চলতি পথে থেমে বা অস্থায়ী দোকানের বেঞ্চে বসেই সন্ধ্যায় হালকা নাশতাটা সেরে নিচ্ছেন গরম গরম ভাঁপা পিঠা কিংবা চিতই পিঠা দিয়ে।

কেউবা চিতই পিঠার সাথে নিচ্ছেন ঝালযুক্ত সরিষা বাটা। প্রতিটি ভাঁপাপিঠা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা এবং চিতই পাঁচ টাকায়। সরিষা বাটা থাকছে ফ্রি।

বাজারে অস্থায়ী পিঠা বিক্রেতা আলমাস মিয়া জানান, শীতের পিঠা অনেক ভালো চলে। ভাপা ১০ টাকা, চিতই দু’পিস ১০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। যুবক-মুরব্বি সব বয়সের লোকই আসেন তার দোকানে পিঠা খেতে। অনেকে বাসায় নিয়ে যান।

পিঠা ক্রেতা রহমান জানান, আমরা প্রায়ই এখানে পিঠা খাই এবং পরিবারের জন্য বাসায় পিঠা নিয়ে যাই। কর্মব্যস্ততার কারণে চাল ভেঙে আটা করে পিঠা বানানোর সময় সুযোগ আর হয় না। ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প দামে হাতের নাগালেই এখন পিঠা পাই। তাই পথের ধারে পিঠাই আমাদের ভরসা।

পিঠা কিনতে আসা বুলবুল বলেন, আমি প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর এই দোকান থেকে পিঠা খাই। শীতকালের খাবার মধ্যে পিঠা অন্যতম। আগে যদিও বাড়িতে এসব পিঠা বানানোর হিড়িক পড়তো এখন তা আর দেখা যায় না।

অস্থায়ী দোকানগুলোর সামনে সারিবদ্ধ বসে পিঠা খাচ্ছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি আব্দুর রহিম বলেন, আমি আর আমাদের কলেজ জীবনের কিছু বন্ধুদেরকে নিয়ে আজ সন্ধ্যায় পিঠা আড্ডায় মিলেছি।

পিঠা বিক্রেতারা জানান, ভাপা পিঠা তৈরির উপকরণ হচ্ছে চালের গুঁড়ো, নারকেল, খেজুরের গুঁড়। গোল আকারে পাতিলে কাপড় পেঁচিয়ে ঢাকনা দিয়ে হাঁড়ির ফুটন্ত গরম পানিতে ভাপ দিয়ে তৈরি হয় ভাপা পিঠা। অন্যদিকে, চালের গুড়ো পানিতে মিশিয়ে মাটির হাড়িতে তৈরি করা হয় চিতই পিঠা।

গ্রামের মানুষ নবান্নের আনন্দে যেভাবে শীতকে বরণ করে নিচ্ছে- হোক তা ঘরে কিংবা বাইরে। বাহারি পিঠার স্বাদে শীতকে বরণ করে নিচ্ছে এখন। শীতের মৌসুমি পিঠার স্বাদ এখন চাইলেই পাওয়া যায় জীবনে।

এইচআর