কাপ্তাই হ্রদে চলছে বোরো ধানের আবাদ

অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪, ১০:২১ এএম
কাপ্তাই হ্রদে চলছে বোরো ধানের আবাদ
ছবি: আমার সংবাদ | কাপ্তাই হ্রদে জেগে ওঠা জলে ভাসা জমিতে চাষ হচ্ছে বোরো ধান

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়। এতে কাপ্তাই হ্রদের বেশ কিছু অংশে পানি কমে গিয়ে জেগে উঠে ছোট বড় চর। যেখানে হ্রদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে চরগুলোতে চাষাবাদ শুরু করে। এবারও শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছে হ্রদের পাশে বসবাসরত চাষীরা।

সম্প্রতি রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা এবং বিলাইছড়ি উপজেলা সংলগ্ন হ্রদের বেশ কিছু অংশে গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধানের সবুজ আবরণে ছেয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদের চারপাশ। এ যেন সবুজের সাথে হ্রদ পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। চারদিকে বোরো ধানের চারা লাগানোর সমারোহ। সেইসাথে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার স্থানীয় চাষিরা। কেউ কেউ কাপ্তাই হ্রদের পাশে জেগে ওঠা এই ছোট বড় চরগুলোকে চাষের উপযোগী করে তুলছে আবার অন্যদিকে অনেক চাষি সেইসব চরে বোরো ধানের চারা লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। 
দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলে ভাসা জমিতে ধানের চাষাবাদ করে আসছে রহমান আলী। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, একসময় কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন মাছ ধরা কমে গিয়ে আয় কমে যেত। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন, মাছ ধরার পাশাপাশি বছরের শুষ্ক মৌসুমে যখন কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে আসবে তখন জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ শুরু করবেন। এরপর থেকে গত ১৫ বছর যাবৎ তিনি এই চাষাবাদ করে  আসছেন। এতে একদিকে যেমন সফলতা পেয়েছেন সেইসাথে বর্তমানে তার সংসারেও দেখা দিয়েছে আশার আলো।

এরকম কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল চাষি মংবাচিং মারমা, সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যা, সুমি বেগম সহ কয়েকজন চাষি জানান, তারা অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বিশেষ করে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হ্রদের এই জলে ভাসা জমিগুলো পলি ভরাট থাকার ফলে লাঙল ছাড়াই চাষাবাদ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া মাটি নরম থাকার ফলে পরিশ্রম যেমন কম হয় তেমনি চাষাবাদে খরচও অনেকটা সাশ্রয়ী হয়। তারা আরো জানান, এই চাষাবাদে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বেশ ভূমিকা পালন করে। অবসর সময় তারা এই চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করে আসছে। তবে কিছু কিছু চাষি জানান, বর্তমানে কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের খরচও অনেক বেড়ে গেছে সেইসাথে নির্ধারিত সময়ের আগে  কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।

তবে কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদে জড়িত এ সকল চাষীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে কৃষিবিভাগ। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি চাষীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়ে থাকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল চাষীদের যারা জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে তাদের আমরা কৃষিবিভাগ থেকে ধানের পাশাপাশি সরিষা, ভুট্টা, সূর্যমুখীর বীজ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করে আসছি। চাষের বিভিন্ন সার এবং সরঞ্জামও চাষীদের দেওয়া হয়ে থাকে।

এছাড়া প্রতিবছর বোরো মৌসুমে কাপ্তাই উপজেলায় জলে ভাষা প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। এবং প্রতিবছরই এসব জমিতে ভালো ফলন হয়ে থাকে। বিশেষ করে, কাপ্তাই হ্রদে এই জলেভাসা জমিতে চাষ করা কৃষকদের আমরা উচ্চ ফলনশীল এবং উন্নত জাতের চারা প্রদান করি যাতে তারা দ্রুত সময়ে এর ফলন ফলাতে পারে। পাশাপাশি আমরা কৃষিবিভাগের সকলেই জলে ভাসা জমিতে চাষ করা এ সকল কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকি। আশা করছি, প্রতিবছরের মতো এবারও কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে ফসলের ব্যাপক ফলন হবে।

বিআরইউ