আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গরু-মহিষের গাড়ি

রাজশাহী প্রতিনিধি: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গরু-মহিষের গাড়ি

একসময় রাস্তায় বের হলেই দেখা মিলতো সারি সারি গরু ও মহিষের গাড়ি। যখন কোন যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না তখন গরু ও মহিষের গাড়িই ছিল মানুষের বাহন কাজে শেষ ভরসা।

 বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে জমি চাষ ও জমির ধান বহন কাজে গরু ও মহিষের গাড়ি ছিল কৃষকের একমাত্র ভরসা। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব গরু ও মহিষের গাড়ির ব্যবহার। বর্তমানে গরু ও মহিষের গাড়ির আর প্রয়োজন হয় না মানুষের। 

আধুনিক যুগে যান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক সহজে চাষাবাদ করতে পারছেন। অথচ একসময় গ্রামবাংলার জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের একমাত্র বাহন ছিল দু‍‍`চাকার গরু ও মহিষের গাড়ি। কিন্তু এখন আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় ও ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে হার মেনে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী গরু মহিষের গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখন আর গ্রামগঞ্জের আঁকা-বাঁকা মেঠো পথে আর তেমন চোখে পড়ে না গরু ও মহিষের গাড়ি। 

আজ থেকে দুই যুগ আগেও গরু মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-কনে যেতো। গরু ও মহিষের গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেতো না। বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহণে গরু মহিষের গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহণ বাহন। গরু মহিষের গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। যুগের পরিবর্তনে মানুষের প্রিয় এই গরু মহিষের গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে গেছে কালের অতল গর্ভে।

জানা গেছে, একসময় গ্রাম-বাংলার মানুষের যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন ছিল গরু মহিষের গাড়ি। পায়ে হাঁটার যুগের অবসান হওয়ার পর মানুষ যখন পশুকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে শিখলো তখন গরু মহিষের গাড়িই হয়ে উঠেছিল সকল পথের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। 

আজ কালের বিবর্তনে সভ্যতার এই যুগে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এইসব গরু মহিষের গাড়ি কমে গেছে। গ্রামে গ্রামে পাকা সড়কে এখন দ্রুত চলে নছিমন-করিমন ভুটভুটি গাড়ি। মুহূর্তেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পণ্য পরিবহণ করা যায়, খরচও কম পড়ে। তাছাড়া গরু মহিষের গাড়ির ভালো কারিগরও এখন সহজে মেলে না। 

এখন একটা গরুর গাড়ি বানাতে ২০ হাজার টাকারও বেশি লাগে, দু‍‍`চাকার দামই প্রায় ১৫ হাজার টাকা পড়ে, দুটি বলদ গরুর দাম ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা।এছাড়াও আছে গরু মহিষকে খাওয়ানোর খরচ,সেই সাথে আছে গরু মহিষ পালনের ঝামেলা। 

যার ফলে এখন আর কেউ গরু মহিষের গাড়ি তৈরি করেন না। রাস্তায় দেখা হঠাৎ করে মহিষের গাড়ি,গাড়িয়ালের নাম আলতাফ আলী,তিনি মহিষের গাড়িতে খড় বহনের কাজ করেন। প্রতিদিন তিনি মহিষের গাড়িতে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে খড় কিনে ব্যবসা করেন।

তিনি বলেন, এখন যান্ত্রিক যুগে কেউ খুব একটা গরু মহিষের গাড়ি ব্যবহার করেন না,আমি প্রায় ২০ বছর ধরে গরু মহিষের গাড়িতে করে খড় বহন করে খড়ের ব্যবসা করে আসছি। গরু মহিষের গাড়ি আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্য। আমি সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাব। 

বিআরইউ