তানোরে আলুর দামে চাষিদের মাথায় হাত

তানোর ( রাজশাহী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪, ০৪:২৩ পিএম
তানোরে আলুর দামে চাষিদের মাথায় হাত

গত মৌসুমে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে লাভের আশায় আলু রোপণ করেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু সেই আশায় পড়েছে হতাশার মেঘ। প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। যদিও বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। 

তাহলে কৃষকের কঠোর পরিশ্রম ও অধিক খরচের এবং ঝুঁকিপূর্ণ আলুর বাজার কেন এত কম এমন হাজারো প্রশ্ন চাষীদের। কারা এই সিন্ডিকেট করে কৃষকদের পথে বসাতে মরিয়া,কে নিয়ন্ত্রণ করছে বাজার, কারা দাম কমাচ্ছে বাড়াচ্ছে এধরনের প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেনা কৃষকরা।

অথচ আলু ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে জমি থেকেই বিক্রি করেছেন কৃষকরা। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, কীটনাশক সারের সিন্ডিকেটের শেষ নেই। বিশেষ করে রোপণের সময় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছে পটাশ সার। এতে করে যে কোন বছরের তুলনায় বিঘায় ১৫-১৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে, সেচের খরচও বাড়তি। অথচ আলু ১১ টাকা ৫০ পয়সা, ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। নেই বহিরাগত আলু কেনা ব্যবসায়ীরা। ফলে চরম হতাশায় ভুগছেন আলু চাষিরা, দাম কম থাকায় কপালে জমেছে চিন্তার ভাজ।

আলু চাষি মইফুল জানান, প্রতিবার ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। গত মৌসুমে আগাম বিক্রির জন্য লোকসান কম হয়েছিল। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবারও ৭৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলু তোলা শুরু হয়েছে। সবকিছুর বাড়তি দাম। 

প্রতি বিঘায় ৫৫-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং লোকসান হবে বিঘায় ১৪-১৫ হাজার টাকা করে। এবার কীটনাশক সার ও সেচের অতিরিক্ত খরচ। বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম দ্বিগুণ হলেও আলুর বাজারে চরম ধস। গাগরন্দ গ্রামের আলু চাষি মুসলেম জানান, গতবার ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

একাধিক আলু চাষিরা জানান, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হিমাগার মালিক সমিতি। তারা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে পথে বসতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে অথচ আলুর দাম নাই। তিনমাস কঠোর পরিশ্রম করার পর আলু উঠে। লাভের জন্য চাষ করা হয়। 

একমাস আগে আলুর বাজার ছিল ২৫-৩০ টাকা কেজি। সেই বাজার কমে ১১-১২ টাকা কেজিতে নেমেছে। আলু রোপণের সময় দ্বিগুণ দামে সার কীটনাশক কিনতে হয়েছে। যেখানে ১ বিঘা জমিতে খরচ হত ৪০-৪৫ হাজার টাকা, আর এবার ৫৫-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সার কীটনাশকের বাড়তি দামের কারণে পর্যাপ্ত দিতে না পারায় বিঘায় ১২-১৪ বস্তা ফলন কম হচ্ছে। আলুর বাড়তি দাম হলে কৃষি দপ্তরের বিপণন বিভাগ হৈচৈ ফেলে দেয়। এখন দাম কম চাষিরা পথে বসছে আর তারা নিরবতা পালন করছে। এক কথায় কৃষক মরল কি বাঁচল সেটা কারো আসে যায় না।

অথচ এই কৃষকরাই দেশে খাদ্য ঘাটতি ফেলতে দেয়নি। আর এদের নিয়েই মহা সিন্ডিকেট। কে শুনে কার কথা। আবার গভীর নলকূপ অপারেটরদের তো আছেই সেচ নিয়ে কারসাজি। বিদ্যুতের দাম বাড়তি বলে বিঘায় ১৫০০-২০০০ টাকা সেচ হার নিচ্ছে। যেখানে বিঘায় ঊর্ধ্বে ৪০০ টাকার বেশি সেচ হার লাগবেনা। এখানেও বেপরোয়া নৈরাজ্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা দেশের তৃতীয়। নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য রোগবালাই কম ছিল। দাম তো নির্ধারণ করা কৃষি অফিসের কাজ না। এজন্য বিপণন বিভাগ রয়েছে। তবে বাজারে যে দাম আছে হিমাগারে রাখলে পরে দাম পাবে বলে মনে করেন তিনি।

এইচআর