শহীদের মর্যাদা পায়নি মুক্তিযুদ্ধে নিহত ফেনীর ১৬ বীর

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম
শহীদের মর্যাদা পায়নি মুক্তিযুদ্ধে নিহত ফেনীর ১৬ বীর
ছবি: আমার সংবাদ

মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ফেনীর ১৬ বীর এখনও শহীদের মর্যাদা পাননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর জেলার পরশুরাম উপজেলার মালিপাথর গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ও বেয়নেটের আঘাতে শহীদ হন ওই গ্রামের ১৯ জন।

সেদিনের বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের বৃদ্ধ শিক্ষক নূরুল আমিন। তিনি বলেন, শীতের সকালে সবে সূর্য উঁকি দিয়েছে। কুয়াশাঢাকা সকালে পরশুরামের মালিপাথর গ্রামের লোকজনেরও সবে ঘুম ভেঙেছে। হঠাৎ চারদিকে চিৎকারের ধ্বনি। ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। ধীরে ধীরে কাছে চলে এলো সেই শব্দ। শুরু হলো রাইফেলের গর্জন। গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী পড়েছে। ঘেরাও করেছে পুরো গ্রাম। চারদিকে চিৎকার, কান্নাকাটি। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ও বেয়নেটের আঘাতে শহীদ হন গ্রামের ১৯ জন।

শিক্ষক নূরুল আমিন আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বরের আগের রাতে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে হানা দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল সকালে মালিপাথর গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দিনভর চলে নির্যাতন, গণহত্যা আর অগ্নিসংযোগ। সেদিন মালিপাথর গ্রামের ৪০টি পরিবারের বসতঘর পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। গুলি করে হত্যা করা হয় ১৯ জনকে।

নূরুল আমিন আরও বলেন, সেদিন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন তার দাদা মুন্সি সৈয়দের রহমান, বাবা হাবিব উল্লাহ, চাচা মফিজুর রহমানসহ তাদের পরিবারের পাঁচজন।

গ্রামের বাসিন্দা আরিফ পাঠান বলেন, সেই রাতে নিহত ১৯ জনকে কাফন ছাড়াই আতঙ্কের মধ্যে কোনোভাবে কবর দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সরকারের পক্ষ থেকে এই বধ্যভূমি বা গণকবর সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও নানা কারণে তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। তার অভিযোগ, বধ্যভূমিটি আজও সংরক্ষিত হয়নি। নিয়মিত ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করায় এক ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে এখানে।

নিহতদের পরিবারের অভিযোগ প্রশাসন একটি ফলক লাগিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।বারবার আবেদনের পর মাত্র তিনজনকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হলেও বাকী ১৬ জনকে শহীদের মর্যাদাও দেওয়া হয়নি।

পরশুরাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল মজুমদার বলেন, মালিপাথর বধ্যভূমিতে কিছু উন্নয়নকাজ হয়েছে। প্রতিরক্ষা দেয়াল ও নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, এর আগে বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন না। খোঁজ খবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা সহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে  প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এআরএস