সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বাড়ছে, তিন মাসে ৪ খুন

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বাড়ছে, তিন মাসে ৪ খুন

ওপরের অংশ, দুটি অণ্ডকোশ ও কিডনিতে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।’

নিহত আমজাদ হোসেন ধামরাইয়ের সুয়াপুর ইউনিয়নের নান্নার এলাকার বাসিন্দা। স্ত্রীসহ সাভার পৌরসভার নবীন মার্কেট এলাকায় খোরশেদ আলম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থেকে তিনি সাভার সিটি সেন্টারের সামনে ফুটপাতে মৌসুমি পণ্যের ব্যবসা করতেন।

গত ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সাভার পৌর এলাকার মধ্য রাজাশন এলাকার নুরুল ইসলামের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ঘটনা ঘটে। ডাকাত দলে ছিল ৬ জন পুরুষ ও ১ জন তরুণী। ডাকাতরা বাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেধে আলমারি ভেঙে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেছে।

এ ডাকাতির ঘটনার দুইদিন আগে ১৯ মার্চ সাভারের ছোট কালিয়াকৈর এলাকার একটি বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়।

গত ১৭ মার্চ রোববার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। তাদের মধ্যে সাংবাদিক মতিউর রহমানের ছেলে জিসান প্রামাণিক। সে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। জিসান বিপিএটিসি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এর আগে গত ১০ মার্চ রোববার সাভারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পৌরসভার বাজার রোডে প্রাইম ব্যাংক সংলগ্ন এলাকায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই যুবকের নাম মো. সোহেল (২৫)। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার বাঁচামারা ইউনিয়নের চরকাটিয়া গ্রামের মো. সিদ্দিক এর ছেলে। স্থানীয়রা ধারণা করছে, কিশোর গ্যাং সদস্যরা অথবা ছিনতাইকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে সাভারে পৃথক দুটি স্থানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন দুই কিশোর। সাভার সিটি সেন্টার সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নিচে ও শিমুলতলা এলাকার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের পাশে মসজিদের গলিতে তাদের ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। আহতদের মধ্যে নাহিদ আল-মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিক ও অপরজন রাতুল ইসলাম শিমুলতলা এলাকার একটি জুতার কারখানায় কাজ করেন। আহতরা এনাম হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সাভার পৌর এলাকার স্মরণিকার এক ব্যবসায়ী ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আহত ওষুধ ব্যবসায়ীর নাম জুবায়ের খান (৫২)। ওইদিন রাত ১১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনকমিনিটি সেন্টারের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন জুবায়ের খান। পরে ৩/৪ জনের একটি ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়েন তিনি।

এর আগে, ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে মডেল মসজিদের সামনে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে আবু সাঈদ হিমেল (২১)। সে সাভার পৌর এলাকার বিনোদ বাইদ মহল্লার কামাল হোসেনের ছেলে। তিনি নীলক্ষেতে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতেন।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টারদিকে পৌর এলাকার দিলখুশাবাগ জিকে গার্মেন্টসের পিছনের গলিতে ছিনতাইকারী কবলে পড়েন দু’ নারী পোশাক শ্রমিক। এ সময় ওই দুইজনে সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন ছিনতাইকারীরা।

পল্লী বিদ্যুৎ শিমুলতলা জোনাল অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, রাত হলেই এ এলাকায় ছিনতাইকারীর আনাগোনা বেড়ে যায়। আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকি। এইতো দুই দিন আগে এখানে ছিনতাইকারীরা একজনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। তিনি ওই এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানোর দাবি জানান।

তবে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া বেশিরভাগ মানুষই নিরাপত্তার কারণে পুলিশে অভিযোগ করতে চান না। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করলেও এসব ঘটনায় ছিনতাইকারীরা আটক না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান বলেন। যে হত্যাকাণ্ডগুলো হয়েছে সেসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত আছে আইনের আওতায় তাদের কয়েকজনকে আনা হয়েছে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স যেখানেই তাদের উৎপাত আছে সেখানে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ইএইচ