কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নে বিত্তিপাড়া থেকে উজানগ্রাম পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে। কাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় বহু আগেই পার হয়ে গেলেও এখনও সেতুগুলোর কাজ অসম্পূর্ণ। ফলে প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার হাজারো মানুষ।
কুষ্টিয়া এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই দুটি সেতুর কাজ পেয়েছে যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএনএম অ্যান্ড এসই (জেভি)। প্রতিষ্ঠানের মালিক পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা-জামজামি সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বর্ষা মৌসুমে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে এলজিইডির কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জিকে খালের সেতুটি অর্ধনির্মিত অবস্থায় রয়েছে। অ্যাপ্রোচ সড়কও এখনো নির্মাণ হয়নি। নেই কোনো সাইনবোর্ড বা প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য। সেখানে উপস্থিত ছিলেন না কোনো ঠিকাদারি প্রতিনিধি বা এলজিইডি কর্মকর্তাও।
স্থানীয় ভ্যানচালক রাসেল হোসেন বলেন, “প্রথমে কাজ শুরু হলেও এখন প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। সেতু না হওয়ায় চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
কুমার নদীর ওপর অপর সেতুটিও প্রায় একই অবস্থা। কাজ বন্ধ থাকলেও দুজন শ্রমিক নির্মাণসামগ্রী পাহারায় নিয়োজিত থাকলেও তারা কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
সড়কের পূর্বের স্টিল ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় বর্তমানে বাস চলাচল বন্ধ। মাঝে মাঝে কিছু ভারী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।
ঠিকাদার নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, “প্রথমে কাজের গতি ভালো ছিল। পরে ব্যাংক সংক্রান্ত জটিলতা ও কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। সত্য বললে বিল আটকে যাবে, তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না।”
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান এই প্রকল্প থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে সহযোগিতা করেন উপসহকারী প্রকৌশলী আজিজুল হক। তিনি এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলার নামে ৫ শতাংশ ঘুষ দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে অনেকে প্রকৌশলী আরিফকে “মি. ফাইভ পারসেন্ট” বলেও উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে উপসহকারী প্রকৌশলী আজিজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থতার অজুহাতে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলা ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার আগে কে কী করেছেন, আমি জানি না। তবে আমি জানি, সেতু দুটির কাজ শেষ না হওয়ায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমি দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, দুই সেতুর প্রায় ৯০% কাজ শেষ হয়েছে, এবং মে-জুনের মধ্যেই সেগুলো চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুষ্টিয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বিভিন্ন কারণে কাজের গতি কমেছে। ঠিকাদার সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। আমি দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি। কেউ গাফিলতি বা দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আক্কাস মন্ডল বলেন, “দুটি সেতুর কারণে মানুষ চরম কষ্টে আছে। বহুবার এলজিইডিকে বলেও কাজের অগ্রগতি হয়নি। মে মাসের মধ্যে কাজ শেষ না হলে আমি এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।”
ইএইচ