বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশালে টানা ভারী বর্ষণ ও নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বরিশাল বিভাগের সব নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, নদী বন্দরে ২ নম্বর বিপদ সংকেত জারি থাকায় শুক্রবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো বরিশাল নদীবন্দর থেকে সব যাত্রীবাহী ও মালবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক মো. সেলিম রেজা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার। এতে নদ-নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, গজারিয়া ও কালাবদরসহ বরিশাল অঞ্চলের একাধিক নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বরিশাল নগরীর বগুড়া রোড, মুন্সির গ্যারেজ, শীতলাখোলা মোড়, জিয়া সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বগুড়া রোডের বাসিন্দা মিসবাহ হোসেন বলেন, “অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয়, আর এখন তো ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বাসা থেকে বের হওয়াই যাচ্ছে না।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক শেখ বলেন, “আমার দোকানে পানি ঢুকে গেছে। মালামাল উঁচুতে তোলার পরও রক্ষা করা যায়নি।”
সচেতন নগরবাসীর অভিযোগ, বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) বহুবার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যত কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। ফলে নগরীর নীচু এলাকাগুলো সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় ডুবে যায়।
এদিকে, ভারী বর্ষণ ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, স্বরূপকাঠি, নাজিরপুর, ভাণ্ডারিয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, বেতাগী, আমতলী, তালতলী এবং ভোলার চরফ্যাশন, তজুমদ্দিন, দৌলতখান উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
ইএইচ