ফসলের মাঠে বিষধোঁয়ার ‘ছোবল’, পথে বসছে শতাধিক কৃষক

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৫, ০১:৫০ পিএম
ফসলের মাঠে বিষধোঁয়ার ‘ছোবল’, পথে বসছে শতাধিক কৃষক

ঝিনাইদহের মহেশপুরে অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে অন্তত ৫০০ বিঘা জমির ফসল। এক রাতের ধোঁয়ায় শেষ হয়ে গেছে শত শত কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন। পথে বসতে চলেছেন অন্তত ২০০ কৃষক। ধোঁয়ার ছোবলে ড্রাগন ফল, কলা, কচু, পেঁপে, মরিচসহ নানা ফল ও সবজি গাছের পাতা ঝলসে গেছে। মাঠজুড়ে এখন শুধু হাহাকার আর কান্না।

কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার বেলেমাঠ গ্রামের পাশের অবৈধ ‘স্টোন ব্রিক্স’ নামের ইটভাটা থেকে শনিবার গভীর রাতে অতিরিক্ত মাত্রায় কালো গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়। ভোরে কৃষকরা মাঠে গিয়ে দেখেন—সব ফসল পুড়ে গেছে। ধোঁয়ার তীব্রতায় কারও চোখ-মুখ জ্বলেছে, কেউ শ্বাসকষ্টেও ভুগেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সন্টু মিয়া বলেন, মাঠে গিয়ে দেখি শুধু ছাই পড়ে আছে। চোখমুখ জ্বলছিল। পরে জানলাম রাতে ইটভাটা থেকে গ্যাস ছাড়া হয়েছে।

 কৃষক সাইফুল বলেন, আমার পুরো জমির কলা, ড্রাগন, মরিচ সব শেষ হয়ে গেছে। কেউ কেউ জানান, তাঁরা এনজিও ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করেছিলেন—এখন সব হারিয়ে দিশেহারা।

ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, স্টোন ব্রিক্স নামের ওই ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন ছাড়াই কালো ধোঁয়া ছাড়ছিল। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও কেউ কিছু বলেনি। ঘটনার পর থেকে ইটভাটা মালিক পলাতক।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, ৫০০ বিঘার ফসল গেছে। ক্ষতিপূরণ না পেলে দুই শতাধিক কৃষক পথে বসবে। মাঠজুড়ে কৃষকের আহাজারি আর ‘ইটভাটা উচ্ছেদ চাই’—এমন দাবিতে মুখর হয়ে উঠেছে এলাকা।

রোববার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেন মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘পটল, কচু, পেঁপে, কলা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফসলের পাতা পুড়ে গেছে। ফলনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।’ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুনতাসির রহমান সরেজমিন পরিদর্শন করে বলেন, ‘এই ইটভাটার বিরুদ্ধে দুই দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিআরইউ