মাগুরা জেলার বিভিন্ন অংশে মধুমতি নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ড্রাম ট্রাকযোগে পরিবহনের সময় সড়কে পড়ে জমে থাকছে। এতে ঝিনাইদহ-মাগুরা-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বালুর স্তূপ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মহাসড়কের কাঠামো, চরম দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারী ও চালকেরা। ধুলাবালির ঝড় বয়ে যাচ্ছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে, এ নিয়ে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর কোনো তৎপরতা নেই। নেই জবাবদিহিতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাগুরা সদর উপজেলার পারনান্দয়ালী, বেলনগর, রামনগর, ঢাকারোড়, পিটিআই, ভায়না,স্টেডিয়াম পাড়া,পুলিশ লাইন অন্তত ৮-১০টি পয়েন্টে রাস্তার পাশে ও মাঝামাঝি জায়গায় বালু পড়ে আছে। ড্রাম ট্রাক থেকে চলার সময় এ বালু ঝরে পড়ে দীর্ঘদিন জমে থাকছে। কোথাও কোথাও তা ছোটখাটো বালুর পাহাড়ে রূপ নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, জেলার মধুমতি নদীর,কামারখালী,বাগবাড়ীয়া,মোহাম্মদপুর সহ একাধিক পয়েন্ট থেকে প্রতিনিয়ত উত্তোলন করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বালু। বেশিরভাগই ইজারা বহির্ভূত ও অনুমোদনহীনভাবে। এসব বালু মহাসড়ক হয়ে যাচ্ছে জেলার বাইরে,মূলত ফরিদপুর, মধুখালী ও খুলনা অঞ্চলের দিকে।
চাউলিয়া এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “রাস্তায় এত বালু, যেন নদী চলে এসেছে মহাসড়কে। বৃষ্টি হলে পিচের রাস্তা কাদা হয়ে যায়, শুকালে ধুলার ঝড়। অথচ কেউ কিছু বলে না।”
সড়ক বিভাগ বলছে, অতিরিক্ত ওজনের বালুবাহী ট্রাক ও ছড়িয়ে পড়া বালুর কারণে মহাসড়কের অনেক অংশে পিচের আস্তরণ উঠে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে গর্ত। কিন্তু সমস্যা সমাধানে নেই তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ।
তবে এই অবৈধ বালুবাহী ট্রাক আটক বা জব্দে কোনো তৎপরতা নেই রামনগর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন শতাধিক বালুবাহী ট্রাক চলাচল করলেও হাইওয়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহণ চালক বলেন, “রামনগর হাইওয়ে ফাঁড়ি পাশ দিয়েই প্রতিদিন ট্রাক যায়, কিন্তু কাউকে আটক করতে দেখি না। কিছু বললেও ‘ফেরত আসার সময় দেখে নেব’ বলে ছেড়ে দেয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.রাসেল বলেন, “আমরা নিয়মিত নজর রাখছি। রাস্তার পাশে বালু পড়লে অপসারণ করা হয়।”
তবে এলাকাবাসী বলছে, সওজ শুধু দায় এড়াতে নিয়মিত কথাই বলে, কিন্তু বাস্তবে বালু সরাতে কাউকে দেখা যায় না। তাদের মতে, নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা না থাকায় দিনদিন সংকট বাড়ছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, মহাসড়কে বালু জমে থাকার ফলে শুধু যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে না, বরং আশপাশের গ্রামীণ পরিবেশে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ধুলা দূষণ। শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা ও ত্বকের রোগ বাড়ছে।
মাগুরা পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন,“এই সমস্যার মূল হচ্ছে অবৈধ উত্তোলন, ট্রাকের নিয়ম না মানা, আর প্রশাসনের নির্লিপ্ততা। জবাবদিহিতার অভাব থেকেই এই পরিবেশ-সড়ক দুটোই ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী বলেন,“সব ট্রাক ত্রিপল দিয়ে ঢাকে না—এটা সত্যি। তাড়াহুড়োতে বা লোকসানের ভয়ে চালকেরা ঠিকভাবে ঢাকে না। তবে প্রশাসন যদি নিয়মিত অভিযানে যায়, তাহলে এটা কমবে।”
একজন ইজারাদার ঠিকাদার মো.একিদুল মুন্সি বলেন,“আমরা সবাইকে সতর্ক করি, কিন্তু চালকেরা অনেক সময় নিয়ম মানে না। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব, প্রয়োজনে রাস্তার পাশে শ্রমিক রেখেও বালু পরিষ্কার করব।”
মহাসড়কে বালুর স্তূপ, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, প্রকৌশল বিভাগের দায়সারা কাজ এবং পুলিশের নীরবতার ফলে মাগুরায় জনদুর্ভোগ ও পরিবেশ হুমকি একসঙ্গে বেড়ে চলছে। সংশ্লিষ্টরা দায় এড়িয়ে গেলেও ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন—এই জবাবদিহি নিশ্চিত করবে কে?
আরএস