‘গর্ভে যমজ, কোলে একটি’—মাগুরায় নবজাতক নিখোঁজ নিয়ে রহস্য

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ০১:২০ পিএম
‘গর্ভে যমজ, কোলে একটি’—মাগুরায় নবজাতক নিখোঁজ নিয়ে রহস্য

সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর গর্ভে থাকা যমজ সন্তানের একজন ‘নিখোঁজ’—এমন অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মাগুরায়। বেসরকারি পিয়ারলেস হাসপাতালে ঘটেছে এই ঘটনা। হাসপাতাল বলছে, প্রসূতির গর্ভে শুধু একটি সন্তানই ছিল। তবে তিনটি পৃথক আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে যমজ সন্তানের অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে শিশুটির পরিবার।

গত ২৮ জুন মাগুরা শহরের পিয়ারলেস হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন আরজিনা বেগম (২৫)। পরিবারের দাবি, শান্তনু ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সাহিদা প্রাইভেট হাসপাতাল ও পিয়ারলেস হাসপাতাল—এই তিন প্রতিষ্ঠানের আল্ট্রাসনো রিপোর্টে যমজ ভ্রূণের কথা বলা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর দেওয়া হয় কেবল একটি সন্তান।

ভাই ইমদাদুল মোল্যা বলেন, সব রিপোর্টে যমজ সন্তানের কথা বলা হয়েছে। আমরা বারবার জিজ্ঞেস করলেও হাসপাতাল সুনির্দিষ্ট কিছু বলছে না। কারও বক্তব্যে মিল নেই। আমরা বিশ্বাস করি, বিষয়টি ইচ্ছাকৃত।

এই অভিযোগে গত ২৯ জুন মাগুরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ইমদাদুল। পুলিশ বলছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও ব্যাখ্যার জন্য তলব করা হবে।

এদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘Vanishing Twin Syndrome’ নামে একটি ব্যাখ্যা আছে—গর্ভাবস্থায় যমজ থাকলেও একটি ভ্রূণ মাঝপথে নি:শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কিছু হলে তা আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে উল্লেখ থাকার কথা এবং অস্ত্রোপচারের সময় তা পরিষ্কারভাবে জানানো উচিত।

কিন্তু এ ঘটনায় সেই ব্যাখ্যা নেই। মেডিকেল নথিতে এমন কিছু উল্লেখ না থাকায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পরিবার বলছে, শিশুটির অস্তিত্ব কোথায়, তার কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি।

ঘটনাটি এখন স্থানীয় পর্যায় ছাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভাষ্য, একটি নবজাতক যদি হাসপাতালে ‘নিখোঁজ’ হয়, তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় দাঁড়াবে?

বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পিয়ারলেস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. অরুণ কান্তি ঘোষের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি।

মাগুরা জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামীম কবির বলেন, ‘আমরা এখনও লিখিতভাবে কিছু পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের প্রশ্ন নয়—এটি দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।

বিআরইউ