নেত্রকোণায় কিশোরী পান্না গণধর্ষণ-হত্যা মামলা: তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ড

গোলাম কিবরিয়া সোহেল, নেত্রকোণা প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম
নেত্রকোণায় কিশোরী পান্না গণধর্ষণ-হত্যা মামলা: তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ড

নেত্রকোণায় কিশোরী পান্নাকে গণধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল তিন জন আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মামলার বিচারক জেলা ও দায়রা জজ ড. এ কে এম এমদাদুল হক সোমবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক উপসম্পাদক কৌশিক চন্দ্র সরকার ওরফে অপু (২৩), যুবলীগ কর্মী মামুন আকন্দ (২৬) এবং সুলতান মিয়া (৩০)।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঠাকুরাকোনা রেলের পাশে রিকশাচালক লাল চান মিয়ার ১৪ বছর বয়সী কিশোরী পান্নাকে ডেকে নিয়ে পাশের সুলতানের ফিশারির ঘরে নিয়ে গিয়ে তিনজন আসামি গণধর্ষণ করে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলেও মেয়েটি বাড়ি না ফেরায় মা আল্পনা আক্তারসহ স্থানীয়রা সুলতানের খামারের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনে পান্নাকে উদ্ধার করেন। পরে ধর্ষকরা ভিকটিমের পরিবারকে কাউকে না জানাতে হুমকি দেয়।

ঘটনার রেশে ক্ষুব্ধ হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর সকালে কিশোরী পান্না আত্মহত্যা করেন। দুপুরে পরিবারের সদস্যরা পাশের পরিত্যক্ত ঘর থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন।

পান্নার মা আল্পনা আক্তার বাদী হয়ে তিন আসামির নামে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আসামিরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করা হয় এবং দ্রুত দাফন করা হয়। পরে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টির পর আদালতের নির্দেশে ১০ সেপ্টেম্বর লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে পুনরায় দাফন করা হয়।

পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর কৌশিক ও মামুনকে আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলাটি পুনরায় ফাইল হয়। পরে সুলতান মিয়াকেও আটক করা হয়। আসামিদের পরিবারের হুমকি-ধামকির কারণে পান্নার পরিবার অন্যত্র নিরাপত্তার স্বার্থে চলে যেতে বাধ্য হয়।

এই ঘটনায় তৎকালীন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও সদর থানার ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ মিছিল, মিটিং ও মানববন্ধন করে।

পুলিশ ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল তিন আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৬ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণের পর আসামিদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রায় প্রদান করা হয়। রায় ঘোষণার সময় তিন আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এই কঠোর রায়ের ফলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কিশোরী পান্নার মা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ইএইচ