ফরিদপুরে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ফরিদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
ফরিদপুরে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ফরিদপুরের সালথার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম সোহাগের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রায় ১০ মাস যাবত ইউনিয়ন পরিষদে না এসে বিভিন্ন মামলায় আত্মগোপনে রয়েছেন। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনে মামলায় বর্তমান ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। 

তবে গ্রেপ্তার এড়াতে দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদে না এলেও থেমে নেই তার স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি। 

এদিকে, এ বিষয়ে আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ জন ইউপি সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান ১০ মাস যাবত পলাতক থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে অনিয়ম দুর্নীতির কার্যক্রম বহাল রেখেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

ইউপি সদস্য ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইকবাল হোসেন মিলে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন ভিজিডি কার্ড, রেশন কার্ড, উন্নয়ন তহবিলের টাকায় কেনা সেলাই মেশিন, স্প্রে মেশিন বন্টনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পরিষদে গরীব দুঃখিদের জন্য সরকারী যা আসে তা ভাগ বণ্টন হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। পরিষদের কোন মেম্বারেরাও জানে না কখন কি আসে। মেম্বাররা জানতে চাইলেও সব গোপন রাখেন সচিব।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা জানান, চেয়ারম্যান শুরু থেকেই আমাদের মূল্যায়ন না করে তার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন এবং পরিষদে সরকারি বরাদ্দ যখন যা আসে আমাদের সাথে মিটিং বা পরামর্শ না করেই তার একক সিদ্ধান্তে তার দলীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিলিয়ে দেন।

২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জয়নাল মুন্সী জানান, ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ উন্নয়ন তহবিল, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, এডিপির প্রকল্পগুলো একক সিদ্ধান্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোনটা আংশিক কোনটা বাস্তবায়ন না করে অর্থ আত্মসাত করেন। আমরা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলী আহমেদ জানান, আমরা শুধু নামে মেম্বার, পরিষদ চালায় সচিব ও চেয়ারম্যানের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। হতদরিদ্র গরীব মানুষদের আমরা সঠিকভাবে কিছুই দিতে পারি না। বেশিরভাগ খেয়ে ফেলে সচিব ও চেয়ারম্যানের লোকেরা। 

৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মাসুদুর রহমান জানান, তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সভা না করেই সভার ভুয়া রেজুলেশন প্রদর্শন এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে কাজ না করেই কাগজে-কলমে উন্নয়ন কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মুকতার হুসাইন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ মেম্বারদেরকে পিআইসি বানিয়ে কাজ শেষে মেম্বারদের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে সব টাকায় জোর করে সচিব নিয়ে যায়। আমরা শুধু কষ্ট করে যাই আর লাভ খায় সচিব আর চেয়ারম্যান।

সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রাজিয়া বেগম জানান, আমরা তার অনেক অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা জীবনের ভয়ে মেনে নিয়েছি কিন্তু আর না। 

রাজিয়া বলেন, চেয়ারম্যান ১০ মাস পরিষদে না এসেই পলাতক থেকে সচিবের মাধ্যমে অনিয়ম দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। পরিষদে যখন যা আসে সচিব সব গোপন রাখে। আমাদেরকে জানায় না।

রাজিয়া বেগম আরও বলেন, পরিষদে ৬৮টি রেশন আসছে। এর মধ্যে আমার প্রতিবেশী আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে সচিব ইকবাল হোসেন ৮টি বড়লোকদের তালিকা ফাইনাল করেছে। অথচ আমি হতদরিদ্র গরীব মানুষের ৩টি তালিকা দেওয়ার পরেও পলাতক চেয়ারম্যান সচিবের মাধ্যমে তা কেটে দিয়েছে। এমনকি এই রেশন কার্ডে সব মেম্বারদের তালিকাভুক্ত কোন নাম নেই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ পলাতক থাকার কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ ব্যাপারে ইউপি সচিব ইকবাল হোসেন জানান, চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ প্রায় ১০ মাস যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদে আসেননা। আমি যা করেছি চেয়ারম্যানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে করেছি।

এ বিষয়ে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা ও একটি দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে। এরমধ্যে দ্রুত বিচার আইনে তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনিচুর রহমান বালী বলেন, আটঘর ইউনিয়নের ৭ জন মেম্বার একসঙ্গে এসে চেয়ারম্যান ও সচিবের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইএইচ