বারসিকের গবেষণা

মানিকগঞ্জে কৃষিজমিতে কীটনাশকের ভয়াবহ প্রভাব

বি. এম খোরশেদ, মানিকগঞ্জ প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
মানিকগঞ্জে কৃষিজমিতে কীটনাশকের ভয়াবহ প্রভাব

মানিকগঞ্জে কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত এবং নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এসব কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকরা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, গবাদিপশু মারা যাচ্ছে ঘাস খেয়ে।

বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত এক অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বারসিক তাদের গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।

গবেষণা অনুযায়ী, গত দুই মাসে মানিকগঞ্জ সদর, ঘিওর, হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলার ২১ জন কৃষকের ওপর নির্দিষ্ট প্রশ্নমালা অনুসারে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।

বারসিক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারকারী ২১ জন কৃষকের মধ্যে ১৮ জনই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। এসব কীটনাশকের মধ্যে কার্বোফুরান, প্যারাকোয়াট, গ্লাইফোসেট ও অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড রয়েছে—যেগুলো সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভিন্ন নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।”

এক মৌসুমে কীটনাশক ক্রয়ে কৃষকদের গড় ব্যয় ২৬,৭৫৭ টাকা। এদের ব্যবহারে সরাসরি মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব কীটনাশকের প্রভাবে ফসলের ক্ষতি ছাড়াও ১০টি গরু, ১১টি হাঁস ও একটি পুকুরের মাছ মারা যায়। এতে কৃষকদের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা।

ভুক্তভোগী কৃষকদের মধ্যে মাথাব্যথা, বমিভাব, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, উচ্চরক্তচাপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, খাওয়ার অরুচি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া, স্নায়বিক দুর্বলতা, ত্বকের রোগ, ঘুমের সমস্যা, পা ভারী হয়ে যাওয়া ও বুক ব্যথার মতো উপসর্গ পাওয়া গেছে। যদিও বেশিরভাগ কৃষক ঘরোয়া বা প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন, তবুও চিকিৎসাব্যয়ে প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তারা।

আলোচকরা বলেন, কৃষকদের সচেতনতার অভাব, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা, বাজারজাতকরণে নজরদারির ঘাটতি, কৃষি বিভাগ ও বিপণন কেন্দ্রের তথ্যঘাটতি—এসবই সমস্যার মূল কারণ।

তারা পরিবেশবিদ, কৃষি ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ কামনা করেন। এছাড়া, অর্গানিক কৃষি ও কৃষি-পরিবেশ রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বারসিকের গবেষণা সহকারী গাজী নাফিউর রহমান হিমেল। সঞ্চালনায় ছিলেন আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়। 

অনুষ্ঠানে বারসিক সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইএইচ