চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পারিবারিক বিরোধের জেরে চাচা ও চাচাতো ভাইদের ছুরিকাঘাতে ভাতিজা খুনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে নিহতের পিতা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন, পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং একজন পলাতক রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নিহত বাহার হোসেন বাবুর পিতা রওশন আলী বাদী হয়ে ভাতিজা শাকিলকে (২৪) প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন—প্রধান আসামি শাকিল (২৪), তার স্ত্রী সুমাইয়া (২০) এবং হাসান গাজী (৪০)।
নিহত বাহার হোসেন বাবু ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের গাজী বাড়ির বাসিন্দা। তিনি সম্প্রতি ওমান থেকে দেশে ফেরেন।
এর আগে হাসান বাবুকে প্রবাসে পাঠানো হয় এবং প্রবাস যাত্রার খরচ বাবদ সব টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি হাসানের পরিবার বাবুর কাছে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।
এই দাবিকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনার আগের দিন স্থানীয় সাহার বাজারে সালিশ বৈঠক হয়, কিন্তু কোনো সমাধান হয় নি। পরে নির্ধারিত হয়, পরদিন বিকেলে আবার সালিশ হবে।
সোমবার বিকেলে সালিশের আগেই দুই পরিবারের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে হাসান ও তার পরিবারের সদস্যরা ধারালো ছুরি দিয়ে বাবু, তার পিতা রওশন আলী এবং ভাই আরমান হোসেনকে আক্রমণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই বাবু গুরুতর আহত হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান।
ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ঘাতক হাসানকে আটক করে অবরুদ্ধ রাখে এবং তাৎক্ষণিক পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর শাকিলকে মুন্সির হাট এলাকা থেকে আটক করে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসলে ক্ষুব্ধ জনতা তাকে গণধোলাই দেয়। পুলিশ শাকিলকে গণধোলাই থেকে রক্ষা করে পাশের একটি পাকা ভবনে আটক রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম অবস্থায় সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে শাকিল ও তার স্ত্রী সুমাইয়াকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আহত রওশন আলীকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে এবং গুরুতর আহত আরমান হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর একজন পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পর বড়গাঁও গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর মধ্যে শোক ও ক্ষোভের আবহ রয়েছে।
ইএইচ